তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গাজায় ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে জার্মানির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের হামলায় নারী ও শিশুসহ হাজারো মানুষ নিহত হলেও জার্মানি চোখ বুজে আছে। আঙ্কারায় জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি গাজায় মানবিক সহায়তা ও স্থায়ী শান্তির জন্য জার্মানির কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, “ইসরাইলের হামলায় শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ প্রায় ৬০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি দল হামাসের কাছে কোনো বোমা বা পারমাণবিক অস্ত্র নেই, কিন্তু ইসরাইলের আছে এবং তারা তা ব্যবহার করছে। জার্মানি, তুমি কি এটা দেখতে পাচ্ছ না?”
তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, এরদোয়ান গাজার বর্তমান পরিস্থিতিকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, গাজায় নৃশংসতা রোধ করা, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং স্থায়ী শান্তির জন্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এখন অপরিহার্য। তিনি বলেন, “যেভাবে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চাই, তেমনি গাজার ওপর ইসরাইলের আগ্রাসনেরও অবসান চাই। তুরস্ক ও জার্মানি দুটি প্রভাবশালী দেশ—এই সংকটের সমাধানে আমরা একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।”
এরদোয়ান আরও জানান, তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা করছে, যদিও তা এখনো পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা এক লাখ টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছি, কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। গণহত্যা ও ইচ্ছাকৃত অনাহার রোধে জার্মানির রেড ক্রস এবং তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৬৮,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তিনি আরও বলেন, তুরস্ক হামাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এরদোয়ান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এটি কেবল একটি রাজনৈতিক সংঘাত নয়, এটি মানবিক বিপর্যয়। যারা নীরব, তারা ইতিহাসের কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলন তুরস্ক-জার্মানি সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল মুহূর্ত তৈরি করেছে। ইউরোপে ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও তুরস্কের সরাসরি সমালোচনা মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে নতুন কূটনৈতিক ভারসাম্য আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন