প্রকাশের তারিখ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫
দিল্লি সরকারি স্কুলে আরএসএস-এর ইতিহাস পড়ানো হবে নতুন ‘রাষ্ট্রনীতি’ কর্মসূচিতে
ভারতের রাজধানী দিল্লির সরকারি স্কুলগুলোতে শীঘ্রই চালু হতে চলেছে ‘রাষ্ট্রনীতি কর্মসূচি’, যার অধীনে পড়ুয়াদের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর ইতিহাস, মতাদর্শ ও সামাজিক কাজ সম্পর্কে পড়ানো হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর ‘নমো বিদ্যা উৎসব’-এ ঘোষিত এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য “গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে সচেতনতা” সৃষ্টি হলেও, আরএসএস-এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অভিভাবক ও সুশীল সমাজের একাংশ এই পদক্ষেপকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাস’ প্রচারের মাধ্যম হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী আশিস সোধি নিশ্চিত করেছেন যে এই পাঠ্যক্রম এখনও প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং এটি আরএসএস-এর “ইতিহাস, মতাদর্শ এবং সামাজিক কার্যকলাপ”-এর উপর আলোকপাত করবে। তিনি ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে জানান, সিলেবাসে আরএসএস-এর প্রধান নেতাদের এবং তাদের সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি এর ঐতিহাসিক গঠনও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।এই পাঠ্যসূচি অনুযায়ী, ১৯২৫ সালে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার কর্তৃক আরএসএস প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরা হবে। এছাড়াও, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতাদের অবদানও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ‘অজানা নায়ক’ (unsung heroes) শীর্ষক একটি অংশে বিনায়ক দামোদর সাভারকর, শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানো হবে।‘রাষ্ট্রনীতি’ কর্মসূচির ক্লাসগুলো প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এর পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা যুব সংসদ, নির্বাচনী সাক্ষরতা ক্লাব, উপকমিটি এবং শিক্ষামূলক সফরেও অংশ নেবে।তবে এই পদক্ষেপের ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবদানগুলি চাপা পড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, "আমাদের সন্তানদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা সব সম্প্রদায়ের সম্পর্কে জানা উচিত, কেবল একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্তদের সম্পর্কে নয়।" তিনি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা আশঙ্কা করছি যে এটি তরুণ মনে সাম্প্রদায়িক পক্ষপাত সৃষ্টি করতে পারে।"শিক্ষকদের মধ্যেও এই পাঠ্যক্রম নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। একজন সরকারি স্কুল শিক্ষক জানিয়েছেন, "এখনও কোনো পুস্তিকা দেওয়া হয়নি, তাই শিক্ষকরা বুঝতে পারছেন না কীভাবে এই পাঠদান শুরু করবেন।" অন্য একজন শিক্ষক যোগ করেছেন যে বর্তমানে স্কুলগুলো ছাত্র কমিটির নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ক্লাসগুলো এখনও শুরু হয়নি।জামিয়া নগরের একজন কমিউনিটি নেতা জাফর হুসেন সতর্ক করে দিয়েছেন যে আরএসএস-কে মহিমান্বিত করা হলে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটতে পারে। তিনি বলেন, “ভারতের গণতন্ত্র গঠনে মুসলিম, শিখ, দলিত ও খ্রিস্টান সহ সকল সম্প্রদায়ের অবদান দেখা আমাদের শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ঐক্যবদ্ধ করবে, বিভাজন নয়।”যদিও স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (SCERT)-এ শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে, তবে কর্মকর্তারা এখনও স্পষ্ট করেননি যে ঠিক কোন ক্লাসগুলিতে এই নতুন পাঠ্যক্রম প্রথম চালু হবে।অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা আহ্বান জানিয়েছেন যে সরকার যেন আরও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং স্কুলগুলোকে ‘দলীয় ইতিহাসের পাঠের প্ল্যাটফর্ম’ হতে না দেয়।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত