প্রকাশের তারিখ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫
স্বাধীনতা জোটের ১১টি জাহাজ: গাজার দিকে মানবিক মিশন, ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্য
গাজার ওপর চাপানো ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙা এবং জরুরি মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ১১টি জাহাজ নিয়ে গঠিত 'স্বাধীনতা জোটের নৌবহর' ভূমধ্যসাগরে তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এর আগে 'বৈশ্বিক সুমুদ বহরে' (Global Sumud Flotilla) ইসরায়েলের হামলা এবং যাত্রী আটকের ঘটনার পর এই নতুন জোটের যাত্রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া উপকূলের কাছ দিয়ে এই বহর এখন গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বহরের মুখপাত্ররা বলছেন, ফিলিস্তিনিরা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের এই সংকল্প অটুট থাকবে।'স্বাধীনতা জোটের নৌবহর', যা ইসরায়েলের অবরোধ মোকাবিলা করে গাজায় সাহায্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে, বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, বহরটি আজ রাতের মধ্যেই 'মধ্যম ঝুঁকি' হিসেবে চিহ্নিত একটি এলাকায় প্রবেশ করবে, যেখানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে।বহরে বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণনৌবহরের একটি জাহাজ 'বিবেক' (Conscience)-এ থাকা মুখপাত্র হুওয়াইদা আরাফ বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে (AA) জানিয়েছেন, শুধুমাত্র তাদের জাহাজেই ২২টি ভিন্ন দেশ থেকে আসা ৯২ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ডজনখানেক ডাক্তার ও সাংবাদিক। আরাফ জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের পূর্বেকার 'সুমুদ বহরের' জাহাজে হামলা, অবৈধভাবে আটক করা এবং যাত্রীদের প্রতি ভয়ানক দুর্ব্যবহারের ঘটনা সত্ত্বেও এই যাত্রা বন্ধ হবে না।অবরোধ ভাঙার দৃঢ় সংকল্পহুওয়াইদা আরাফ, যিনি কয়েক বছর আগে 'মাভি মারমারা' জাহাজে ইসরায়েলি হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবকদের ঘটনার সাক্ষী, তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, "ইসরায়েলের বর্বরতা আমাদের থামাতে পারবে না। কারণ আমরা জানি, এই বর্বরতা এমন একটি বিশ্ব তৈরি করছে যেখানে 'যার শক্তি আছে, তার অধিকার আছে' এবং কারো নিরাপত্তা নেই। এমন একটি বিশ্ব আমরা নিজেদের বা আমাদের সন্তানদের জন্য মেনে নিতে পারি না।"আরাফ বিশ্বের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন "উঠে দাঁড়ান" এবং জাহাজগুলোর জন্য "নিরাপদ পথের দাবি" জানান। তিনি অবিলম্বে ইসরায়েলের সাথে সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার এবং ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য নিজ নিজ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 'স্বাধীনতা জোটের নৌবহরের' আমেরিকান সদস্য রাইট নিশ্চিত করেছেন, ফিলিস্তিন স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজগুলো তাদের যাত্রা চালিয়ে যাবে। তুরস্কের প্রতিনিধি সোঙ্গুর আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই তারা গাজার উপকূলে পৌঁছাতে পারবেন।পূর্ববর্তী হামলা ও আটকএর আগে, ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় গাজায় মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া 'বৈশ্বিক সুমুদ নৌবহরে' (Global Sumud Flotilla) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা চালায়। তারা অবৈধভাবে বহু নৌকা ও জাহাজ জব্দ করে এবং শত শত যাত্রীকে আটক করে। এই বহরটি ছিল গাজায় সম্মিলিতভাবে সাহায্য পৌঁছানোর জন্য রওনা হওয়া সবচেয়ে বড় বহর।এই বহর, যার লক্ষ্য শুধু সাহায্য পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং গাজার মানুষের স্বাধীনতার অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা—এই বার্তা দিচ্ছে যে আন্তর্জাতিক সংহতি ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত