প্রকাশের তারিখ : ২১ অক্টোবর ২০২৫
অনলাইনে নারীর ছবি প্রকাশের দায়ে আমিরাতে ২০ হাজার দিরহাম জরিমানা
অনলাইনে অন্যের ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর কঠোর অবস্থান আরও একবার প্রমাণিত হলো। সম্প্রতি আবুধাবির একটি আদালত এক ব্যক্তিকে এক নারীর ছবি ও ভিডিও তার অনুমতি ছাড়াই সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার অপরাধে (বিশ হাজার দিরহাম) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত এটিকে 'গোপনীয়তা লঙ্ঘন' হিসাবে গণ্য করে রায় দিয়েছেন, যার ফলে ওই নারী নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।এটি ইউএই-এর সাইবার আইন ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে কঠোরতার নজির স্থাপন করল। বিস্তারিত প্রতিবেদন আবুধাবি ফ্যামিলি, সিভিল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্লেইমস কোর্ট কর্তৃক এই রায় জারি করা হয় ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।আদালতের নথি অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি ভুক্তভোগী নারীর ছবি ও ভিডিও ক্লিপস একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে তিনি মানসিক কষ্টের শিকার হন এবং তার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এর ভিত্তিতে ওই নারী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত দেওয়ানি মামলা দায়েরের আগেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছিল। আবুধাবি ক্রিমিনাল কোর্ট তাকে নারীর অনলাইন গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। পরবর্তীতে আপিল আদালত সেই রায় বহাল রাখে এবং আর কোনো আপিল না হওয়ায় মার্চ মাসেই ফৌজদারি দণ্ড চূড়ান্ত হয়।দেওয়ানি আদালতের যুক্তি দেওয়ানি আদালত পর্যবেক্ষণে জানায় যে, গোপনীয়তা লঙ্ঘন একটি ভুল কাজ, যা নারীর নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি করেছে। যদিও ভুক্তভোগী নারী তার সম্মান ও সুনামের ক্ষতির জন্য ৫০ হাজার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন, আদালত প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে ২০ হাজার দিরহাম ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট বলে মনে করেন। আদালতের যুক্তি ছিল, প্রমাণে উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতি বা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক কুফল দেখা যায়নি। তাই মানসিক কষ্ট, বেদনা ও সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য এই অর্থই যথেষ্ট।আদালত এই রায়ের ক্ষেত্রে ফেডারেল সিভিল ট্রানজ্যাকশনস আইনের আর্টিকেল ২৮২-এর উপর নির্ভর করে, যেখানে বলা হয়েছে: "অন্যের যে কোনো ক্ষতি সাধনকারী ব্যক্তি—আইনত যোগ্য না হলেও—ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।" ইউএই-এর কঠোর সাইবার আইন এই রায় ইউএই-এর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষার কঠোর নীতিকে তুলে ধরে। ইউএই-তে সম্মতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভয়েস নোট, ব্যক্তিগত বার্তা বা স্ক্রিনশট শেয়ার করলে ফৌজদারি অভিযোগ হতে পারে।একজন আইনি বিশেষজ্ঞের মতে, 'সামাজিক মাধ্যম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেল বা ব্লগ—সবই ইলেকট্রনিক মাধ্যমের আওতাভুক্ত। একবার কিছু শেয়ার করা হলে তা সাইবার অপরাধে পরিণত হয়।' এর জন্য ৫ লাখ পর্যন্ত জরিমানা, কারাদণ্ড এবং ক্ষেত্রবিশেষে অ-নাগরিকদের বহিষ্কারও হতে পারে। এমনকি সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও যদি প্রেক্ষাপট বা পরিচিতির মাধ্যমে কারও পরিচয় অনুমান করা যায়, তাহলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ইউএই-এর আইন অনুযায়ী, মানহানির ক্ষেত্রে তথ্যটি সত্য হলেও যদি তা বিনা কারণে শেয়ার করা হয় এবং এর ফলে সুনামের ক্ষতি হয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত