প্রকাশের তারিখ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫
পল্টন ট্রাজেডির বিচার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে দাবি জামায়াতের
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে সংঘটিত ‘লগি-বৈঠা হত্যাকাণ্ডের’ বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার দাবি উঠেছে নতুন করে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, এদিন সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া জাতির জন্য কলঙ্ক। তারা অভিযোগ করেন, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের এখনই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এই দাবি জানান। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশে তিনি বলেন, “সেদিন লগি-বৈঠা দিয়ে যে নিষ্ঠুর ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতি এখনও সেই ঘটনার বিচার পায়নি।”অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, “লগি-বৈঠার খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। ৩০-৪০ বছর আগের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে, অথচ ২৮ অক্টোবরের মতো প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি—এটি জাতির সঙ্গে তামাশা।” তিনি দাবি করেন, “মেনন, ইনু ও শেখ হাসিনার মতো নেতাদের বিচারের জন্য মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে এই মামলাগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দিতে হবে।”তিনি আরও বলেন, “২০০৬ সালে যেমন তারা লাশের ওপর নৃত্য করেছিল, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ও লাশ পুড়িয়েছে। এই খুনিদের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে।”দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা বলেন, “গত ১৯ বছরে দেশের রাজনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তরুণদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সেই স্থবিরতা ভাঙে। তাদের রক্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।”তিনি সতর্ক করে বলেন, “কেউ কেউ একই দিনে গণভোট আয়োজনের পাঁয়তারা করছে, যার লক্ষ্য জুলাই সনদকে অকার্যকর করা। সরকারকে এই পথ থেকে সরে এসে নভেম্বরেই গণভোট দিতে হবে। তাহলে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অবসান ঘটবে।”সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিন। ছাত্রশিবির দিনটিকে ‘পল্টন ট্রাজেডি দিবস’ হিসেবে পালন করে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, সেই হত্যাকাণ্ডের মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হোক এবং শেখ হাসিনা সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।”তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা এত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যে তাকে একশবার নয়, দুই হাজারবার ফাঁসি দিলেও শাস্তি শেষ হবে না।”সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। এতে আরও বক্তব্য দেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়সহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত