প্রকাশের তারিখ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫
আমরা কিছু কাজের পর ঘুমিয়ে পড়ি, খতমে নবুওয়তবিরোধীরা তো ঘুমায় না
বাংলাদেশের প্রবীণ আলেম ও সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের আহ্বায়ক আল্লামা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরী আসন্ন আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত সম্মেলন নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের তীব্রতা তুলে ধরেছেন।আগামী ১৫ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য হলো কাদিয়ানিদের (আহমদিয়া সম্প্রদায়) রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করার দাবি আদায় করা। দেশের বিভিন্ন খতমে নবুওয়ত আন্দোলনকারী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এই পরিষদ গঠিত হয়েছে। পীর সাহেব মধুপুরীর কথায় স্পষ্ট, যদি সরকার এই দাবি মানতে গড়িমসি করে, তবে আন্দোলনকে আরও কঠোর করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।আল্লামা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরীর নেতৃত্বে গঠিত 'সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদ' ১৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত সম্মেলন আয়োজনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এক বছর আগেই মধুপুর থেকে এই সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং গত ছয় মাস ধরে জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, রাজশাহী, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সব বিভাগে সফরের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।আন্তর্জাতিক সমর্থন ও শীর্ষ আলেমদের অংশগ্রহণপ্রবীণ এই আলেম দীনের প্রতি দরদ ও রাসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসার তাগিদেই এই বয়সে নিরলস সফর করছেন। তিনি জানান, আফগানিস্তানের সরকারের আমন্ত্রণে তিনি দেশ সফর করেছেন এবং সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, ধর্মমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যদিও ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে আফগান আলেমগণ এখনই আসতে পারছেন না। সম্প্রতি তিনি পাকিস্তান সফর করেছেন এবং সেখানে আল্লামা তাকী উসমানি সাহেবকে দাওয়াত দিয়েছেন, যিনি সম্মেলনে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া মিসর ও আরব জাহান থেকে মেহমান আসছেন। ভারত থেকে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী, সাইয়েদ মাহমুদ মাদানী ও সাইয়েদ মওদুদ মাদানীসহ বিশ্ববরেণ্য আলেমদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।মূল দাবি ও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিসম্মেলনের মূল দাবি হলো, বিশ্ব মুসলিমের সর্বসম্মত আকীদা 'খতমে নবুওয়ত'-এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করা। পীর সাহেব মধুপুরী উল্লেখ করেন, বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশই কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণা করেছে, কিন্তু বাংলাদেশে আজও তা হয়নি। তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী সপ্তাহে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসে দাবি জানানো হবে। "আমরা তো কিছু কাজের পর ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু কাদিয়ানিরা তো কাজ করতেই থাকে। তারা তো ঘুমায় না,"—মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার দাবি মেনে নিলে আলহামদুলিল্লাহ, অন্যথায় যেভাবে দাবি আদায় করতে হয়, সেভাবেই 'মোকাবিলা' করা হবে।দীর্ঘদিনের খতমে নবুওয়তের আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে তিনি বিভিন্ন ছোট-বড় সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে সফল হয়েছেন। তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়ত, খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটিসহ সকল সংগঠন এখন 'সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদ'-এর ব্যানারে একযোগে কাজ করছে। তিনি মনে করেন, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দাবি আদায় করা সহজ হবে। তিনি জানান, ১৯৯৭ সালের বিতর্ক (বাহাস) এর পর থেকে এই আন্দোলন অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেও সম্প্রতি কাদিয়ানিদের তৎপরতা বাড়ায় এই মহাসম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত