প্রকাশের তারিখ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই গণঅভ্যুত্থয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড
জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল। একই মামলার আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।জুলাই গণঅভ্যুত্থয়ের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১ আজ সোমবার রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ দুপুর পৌনে তিনটার দিকে এ রায় দেন। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।বেলা ১২টা ৩৪ মিনিটে রায় পাঠ শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে ৬ ভাগে বিভক্ত মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ আদালত উপস্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনাল জানায়—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং দ্বিতীয় অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।আদালত রায়ে উল্লেখ করে, আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ও পদ্ধতিগত দমন-পীড়নের নির্দেশনা দেওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রত্যক্ষ দায়ী। একই ধরনের নির্দেশনার মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছে ট্রাইব্যুনাল।সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রেপ্তারের পর রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি প্রদান করেন এবং নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেন। সত্য উন্মোচনে ভূমিকার কারণে তার সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর নির্ধারণ করে আদালত।এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা হলো। রায়টি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় দেখানো হয়।বর্তমানে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের লকডাউন ও শাটডাউন আহ্বান ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা ঘোষণা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।প্রসিকিউশন মামলায় মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, দালিলিক প্রমাণ ও জব্দতালিকা চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং দলীয় সংগঠনগুলোর সশস্ত্র ক্যাডারদের ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি দমন-পীড়নের নির্দেশ দেন। এতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত ও বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত