প্রকাশের তারিখ : ২২ নভেম্বর ২০২৫
পশ্চিম তীরে সহিংসতার অভিযোগে চার ইসরাইলি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল সিঙ্গাপুর
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে “চরম সহিংসতার গুরুতর কর্মকাণ্ড” করার অভিযোগে চার ইসরাইলি নাগরিকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অভিযুক্তদের সিঙ্গাপুরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে এবং তাদের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। আল-আরাবিয়া জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে অবস্থানের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।সিঙ্গাপুর প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে সহিংসতায় অভিযুক্ত ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। শুক্রবার এক ঘোষণায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চরম সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত মেইর মোর্দেচাই এটিঙ্গার, এলিশা ইয়েরেড, বেন-জিওন গোপস্টেইন এবং বারুচ মারজেলের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে এবং তারা সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে পারবেন না।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, এ চারজনের কর্মকাণ্ড বেআইনি এবং ফিলিস্তিনে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক আইন ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে সিঙ্গাপুর অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাস্তবতা পরিবর্তনের যেকোনো একতরফা প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে।”উল্লেখ্য, এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই চার ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুর স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থানের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করল।ইসরাইলি রাজনীতিকদের সমালোচনাসিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান সেপ্টেম্বরে এক সংসদীয় ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন যে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠীর নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তিনি ইসরাইলি রাজনীতিকদেরও সমালোচনা করেন, যারা পশ্চিম তীর বা গাজার কিছু অংশ সংযুক্ত করার দাবি তুলেছেন। তাঁর মতে, এই সংযুক্তিকরণ পরিকল্পনা—যা “ইওয়ান বসতি” প্রকল্প নামে পরিচিত—পশ্চিম তীরকে বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত করে পরিস্থিতি আরও জটিল করবে।ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির সম্ভাবনানিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সিঙ্গাপুর জানিয়েছে, উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। ২০২৪ সালে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির পক্ষে একাধিক প্রস্তাবে দেশটি ভোট দিয়ে সেই অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে মনে করে। তবে ইসরাইল এই ব্যাখ্যা মানে না; তারা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের যুক্তি তুলে ধরে এ বসতি সম্প্রসারণ চালিয়ে যাচ্ছে।
সিঙ্গাপুর এবং ইসরাইলের মধ্যে ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম তীরে সহিংসতার ঘটনায় সিঙ্গাপুরের এই কঠোর পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত