রাগ মানুষের প্রাকৃতিক একটি আবেগ, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ না করলে ব্যক্তি, সমাজ ও আত্মার ওপর পড়ে ভয়ানক প্রভাব। ইসলাম রাগ দমনের ব্যাপারে হাদিসে সুনির্দিষ্ট উপদেশ দিয়েছে, যা মানুষকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে আত্মিক ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ইসলামে রাগকে ‘শয়তানের জ্বালানো আগুন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইমাম বাকির (আ.) বলেন, “রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা মানুষের হৃদয়ে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।” এ অনুভূতি যতক্ষণ না নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, ততক্ষণ তা মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত ও বিধ্বংসী আচরণের দিকে ঠেলে দেয়।
রাগের প্রভাব শুধু মানসিক নয়, এটি হৃদ্রোগ, চোখের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক ও বিষণ্নতার মতো শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। সামাজিকভাবে এটি সম্পর্ক ছিন্ন করে, সহিংসতা ও ঘৃণা ছড়ায়। ইসলাম রাগকে দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তা দমনকে শক্তি হিসেবে দেখেছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন:
আউযুবিল্লাহ পড়া: শয়তান থেকে আশ্রয় চাইলে রাগ প্রশমিত হয় (সহিহ বুখারি)
নীরব থাকা: রাগের সময় কথা না বলাই উত্তম (মুসনাদে আহমদ)
শারীরিক ভঙ্গি পরিবর্তন: দাঁড়িয়ে থাকলে বসা, বসে থাকলে শুয়ে পড়া (আবু দাউদ)
‘রাগ করো না’ পরামর্শ মেনে চলা: এটি রাসুলের বারবার দেওয়া শিক্ষা (সহিহ বুখারি)
রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি: রাগ দমনকারীর অন্তর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তৃপ্তিতে ভরে দেবেন (তাবারানি)
রাসুলের জীবনী অনুসরণ: অপমানের মুখেও শান্ত থাকার অনন্য দৃষ্টান্ত (ফাতহুল বারী)
দোয়া: আল্লাহর কাছে রাগের সময় সত্য কথা বলার তৌফিক চাওয়া (সহিহ আল-জামি)
রাগ দমন আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। কোরআনে বলা হয়েছে—“যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন” (সুরা আলে ইমরান ১৩৩-১৩৪)।
তবে রাগের ব্যবহার সবসময় নেতিবাচক নয়। যদি রাগ হয় আল্লাহর সীমালঙ্ঘনের বিরুদ্ধে, তা নিয়ন্ত্রিত হলে প্রশংসনীয়। রাসুল (সা.) তখনও রাগ প্রকাশ করতেন, তবে তা ন্যায় ও নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে।