ইসরায়েলের সকল শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকার অবশিষ্টাংশ পূর্ণ দখলের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা—এ পদক্ষেপে ইসরায়েলি বন্দিদের জীবন বিপন্ন হবে এবং হামাসের সঙ্গে সম্ভাব্য মুক্তি চুক্তির সুযোগ নষ্ট হবে।
ইসরায়েলি দৈনিক ইদিয়োত আহরোনোত-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টাব্যাপী ‘ক্যাবিনেট’ বৈঠকে নিরাপত্তা বাহিনীর সকল প্রধান নেতানিয়াহুর পূর্ণ দখল পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন। তীব্র বিতর্ক সত্ত্বেও বৈঠকের শেষে এ পরিকল্পনা অনুমোদন পায়।
সেনাপ্রধান হারজি হালেভি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাচি হানেগবি এবং মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নেয়া—তিনজনই জানান, পরিকল্পনাটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর বিকল্প পথ রয়েছে। হানেগবি বৈঠকে উল্লেখ করেন, যুদ্ধবিরতি হলে অন্তত ১০ জন বন্দি মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নেতানিয়াহুর অনুমোদিত পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে—
প্রথম ধাপ: গাজা সিটি দখল, প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া, শহর ঘেরাও ও আবাসিক এলাকায় স্থল অভিযান।
দ্বিতীয় ধাপ: মধ্যাঞ্চলের শরণার্থী শিবিরগুলো (নুসেইরাত, মাঘাজি, বুরেইজ) দখল, যেখানে ইতোমধ্যেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮৭% এলাকা ইতোমধ্যে ইসরায়েলি দখলে বা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের আওতায়। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, নতুন সামরিক অভিযান “বিপর্যয়কর পরিণতি” ডেকে আনবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজা সিটি কয়েক মাস দখলে থাকার পর এপ্রিল ২০২৪-এ সেনারা আংশিকভাবে সরে আসে। তবে দেইর আল-বালাহ ও মধ্যাঞ্চলের কিছু শিবির এখনো পূর্ণ দখলে না গেলেও, ইসরায়েলি বিমান ও কামান হামলায় শত শত ভবন ধ্বংস হয়েছে।
প্যালেস্টিনি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৬১ হাজার ২৫৮ জন নিহত, ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫ জন আহত এবং ৯ হাজারেরও বেশি নিখোঁজ হয়েছেন। লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত, মারাত্মক খাদ্য সংকটে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিশু।