ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রায় নয় বছর আগে সংঘটিত এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের মামলায় স্বামী সোহেল রানাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মামলার অপর দুই আসামি—শাশুড়ি শিউলী বেগম ও ফুফু শাশুড়ি মাজেদা বেগমকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে যৌতুকের জন্য স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে হত্যার দায়ে স্বামী সোহেল রানাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।রায়ে আদালত সোহেল রানাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেন। ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেন, তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে এই অর্থদণ্ডের টাকা ভিকটিমের পরিবারকে প্রদান করতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত সোহেল রানা বর্তমানে পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।আদালতের প্রসিকিউটর এরশাদ আলম (জর্জ) সাংবাদিকদের জানান, মামলার অন্য দুই আসামি—সোহেল রানার মা শিউলী বেগম ও ফুফু শাশুড়ি মাজেদা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন। এদের মধ্যে শিউলী বেগম পলাতক, আর মাজেদা বেগম জামিনে থেকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সোনিয়া আক্তারের সঙ্গে সোহেল রানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সোহেল রানা, তার মা ও ফুফু শাশুড়ি মিলে সোনিয়ার কাছে যৌতুক দাবি করতেন এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে সোনিয়ার বাবা চান মিয়া ৯০ হাজার টাকা যৌতুক দেন। কিন্তু কিছুদিন পরই আরও ৫০ হাজার টাকার দাবি ওঠে, যা না পেয়ে তারা নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়।২০১৬ সালের ১৭ জুলাই রাতে সোহেল রানা ও অন্য আসামিরা মিলে সোনিয়াকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরদিন ১৮ জুলাই চান মিয়া কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা দায়ের করেন।মামলাটি তদন্ত করে পরিদর্শক শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের ওই বছরের ২৬ অক্টোবর তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ৩ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। বিচার চলাকালে মোট ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে প্রায় এক দশক পর আদালত বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করে।এই রায়ে যৌতুকের কারণে সংঘটিত নারীনির্যাতন ও হত্যার মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন মামলার প্রসিকিউশনপক্ষ।