গাজা গণহত্যায় মাইক্রোসফটসহ বিগ টেক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ
গাজায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক গণহত্যা দুই বছর পেরোলেও তা থামেনি। অভিযোগ উঠছে—বিগ টেক কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি, ডেটা সিস্টেম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্রে রূপ নিয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, এই সহযোগিতা না থাকলে এমন ধ্বংসযজ্ঞ সম্ভব হতো না।বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান—মেটা, গুগল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট—উদ্ভাবন ও ডিজিটাল অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ইসরায়েলের গাজায় ‘গণহত্যা অভিযানে’ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে।লিক হওয়া নথি, হুইসলব্লোয়ারদের বক্তব্য ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ক্লাউড কম্পিউটিং, মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ও ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।সম্প্রতি মাইক্রোসফট ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ইউনিটের প্রতি সেবা বন্ধ করেছে—যে ইউনিট গাজা ও পশ্চিম তীরে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির ফোনালাপ নজরদারি করছিল। তবে মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক কর্মীরা বলছেন, এই ঘোষণা কেবল ‘জনসংযোগ প্রচেষ্টা’, প্রকৃত বিচ্ছিন্নতা নয়।সাবেক মাইক্রোসফট কর্মী নিসরিন জারাদাত বলেছেন, “ইসরায়েলের এই গণহত্যা মাইক্রোসফটের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব ছিল না।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর ফিলিস্তিনিদের যোগাযোগ তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের অনুমোদন দেয়।জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ তাঁর প্রতিবেদনে জানান, ইসরায়েল ২০২১ সালে ‘প্রজেক্ট নিম্বাস’ নামে ১.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে গুগল ও অ্যামাজনকে সরকারি ক্লাউড অবকাঠামো তৈরির দায়িত্ব দেয়। এতে ইসরায়েলের গোটা প্রশাসনিক কাঠামো এই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ে।এছাড়া, “ল্যাভেন্ডার”, “গসপেল” ও “হোয়্যার’স ড্যাডি?” নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।ফিলিস্তিনি ডিজিটাল অধিকার সংস্থা ‘৭আমলেহ’-এর অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার জালাল আবুখাতের বলেন, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণে সক্ষম নয়, তাই তারা বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাহায্য নিচ্ছে।”তিনি আরও বলেন, “এই কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। ফলে তারা গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধে অংশীদার হয়ে পড়ছে।”অন্যদিকে, মেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা ফিলিস্তিনপন্থী কণ্ঠরোধ করছে, অথচ ইসরায়েলি উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। ৭আমলেহর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি এক ধরনের “অ্যালগরিদমিক বৈষম্য”, যা সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।মানবাধিকার কর্মীরা এখন আন্তর্জাতিক আইনে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে দায়ী করার আইনি কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছেন। তারা আশা করছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার মতো এখানেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।