সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ১০টি চুক্তি ও প্রকল্প অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাতিল করেছে বলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ফেসবুকে প্রকাশিত তালিকাটি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। চুক্তি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য সরকার এবং জনগণের মধ্যে এই বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে চলমান বিভ্রান্তি নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে চুক্তি বাতিলের একটি তালিকা প্রকাশ করার পরই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব মহলে আলোচনা শুরু হয়। সোমবার (২০ অক্টোবর) প্রকাশিত ওই পোস্টে বলা হয়, 'অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরই চুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং যথাযথ পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।' এর সঙ্গে তিনি ১০টি চুক্তি বাতিল এবং ৪টি চুক্তি পুনর্বিবেচনা বা স্থগিতের তালিকাও জুড়ে দেন।মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এই তালিকা প্রসঙ্গে বলেন, "উপদেষ্টা আসিফ কমেন্ট না করলেও পারতেন। যে তালিকাটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে তা সত্য নয়। শুধু একটা ছাড়া।" তিনি নিশ্চিত করেন যে, তালিকাভুক্ত চুক্তি ও প্রকল্পগুলোর মধ্যে কেবল একটি চুক্তিই অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে। বাকি চুক্তি বা প্রকল্পগুলোর বিষয়ে তিনি জানান, "বাকিগুলোর কয়েকটি আছে যে বিভিন্ন পর্যায়ে আছে এবং ঠিক ওই নামে নেই। অন্য রকম ডেসক্রিপশনে (বিবরণ) আছে।" আসিফ মাহমুদের প্রকাশিত বাতিল ও পুনর্বিবেচনাধীন চুক্তির তালিকায় যা ছিল: ক্রমিক চুক্তি ও প্রকল্পের নাম স্ট্যাটাস (ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী) ১. ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্প বাতিল ২. অভয়পুর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ বাতিল ৩. আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডোর বাতিল ৪. ফেনী নদী পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাতিল ৫. কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্প স্থগিত ৬. বন্দরের ব্যবহার সংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি বাতিল ৭. ফারাক্কাবাদ সংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব বাতিল ৮. সিলেট-শিলচর সংযোগ প্রকল্প বাতিল ৯. পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি বাতিল ১০. ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল (মিরসরাই ও মোংলা ) বাতিল ১১. আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি পুনর্বিবেচনা ১২. গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন/পুনর্বিবেচনা ১৩. তিস্তা নদী পানি বণ্টন চুক্তি খসড়া অবস্থায় ছিল, বাস্তবায়নের জন্য আলোচনায় ১৪. ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি জিআরএসই-এর সঙ্গে ট্যাগ বোট চুক্তি বাতিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, এই তালিকার বেশিরভাগ তথ্যই সঠিক নয়। তিনি পরামর্শক আসিফের এমন 'অপ্রয়োজনীয়' মন্তব্যের বিষয়েও ইঙ্গিত দেন। এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সংবেদনশীল এবং সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি বাতিলের মতো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক মুখপাত্রের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়া উচিত নয় বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন।