ইতিহাসের সহস্র পাতা উলটিয়ে আজ স্মরণ করতে চাই নববী যুগের কথা। যখন ধরার বুকে ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দীর্ঘ সাধনার পরে আসমানী আদেশে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ কররেন— 'ইকরা'। পড়ো তোমার প্রভুর নামে। প্রথম সেই পড়া শুরু হয় উঁচু এক পাহাড়ের নির্জন গুহার অভ্যন্তরে। তারপর... মসজিদে নববীর প্রাঙ্গনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিষ্ঠা করেন 'সুফফা'। সাহাবীরা সেখানে পড়ে থাকতেন। জ্ঞান অর্জন করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের সংস্পর্শে ও খোদা প্রদত্ত জ্ঞানের পরশে মানুষ পরিণত হতো উজ্জ্বল নক্ষত্রে। আলো ছড়াতো চারিধারে। সুফফা থেকে ইলমী সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে মদীনার অলিতে-গলিতে। দুনিয়ার আলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আসমানী ইলমের নূর।
হযরত আবু হুরায়রা রা.। সুফফার অন্যতম সদস্য। খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকতেন সুফফায়। জ্ঞান অর্জন করতেন সমুদ্রসম পিপাসা নিয়ে। তিনি দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সুফফায় জ্ঞান অর্জনে আত্মমণ্ন হন। ইলমের জন্য হয়তো তাঁর চেয়ে বেশি কেউ ত্যাগ স্বীকার করেনি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের ইন্তেকালের পর যখন কোন বিষয়ে কথা উঠতো— প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা বলতেন আবু হুরায়রা রা.। যে কোন বিষয়ে যে কোনো সময় আবু হুরায়রা রাযি. শোনাতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমিয় বাণী। সবাই মুগ্ধ হয়ে যেতেন। কেউ কেউ ঈর্ষা করতেন একটুখানি।
একবার হলো কি, কেউ একজন মন্তব্য করে বসলো, সব হাদীস আবু হুরায়রা রা. একাই জানেন নাকি? ঈষৎ রেগে গেলেন আবু হুরায়রা রা.। স্বরটা একটু গম্ভীর করে বললেন, আমি কি তোমাদের মতো ব্যবসা করেছি? আমি কি তোমাদের মতো চাষ করেছি খেতে? আমি তো সর্বক্ষণিক পড়ে ছিলাম রাসূলের সুফফায়। রাসূলের দরবারে। জ্ঞানের সরবরে। সাহবীরা চুপ হয়ে গেলেন। একদম নীরব হয়ে গেলেন সবাই।
যখন আরবের বিভিন্ন অঞ্চল মুসলমানদের করতলগত হতে শুরু হলো। শহরের পর শহর মুসলমানদের শাসনাধীন হতে লাগলো। তখন রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিজিত শহর গুলোতে পাঠিয়ে দিতেন। তাঁরা সেখানে যেতেন শিক্ষক হয়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান বিন হুসাইন রাযি.কে পাঠান বসরায়। উবাদা বিন সামেত রাযি.কে হিমসে। মুয়ায বিন জাবাল রাযি.কে ফিলিস্তিনে। আর দামেশকে পাঠান আবু দারতা রাযি.কে। তারা নিজ নিজ অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে শুরু করেন। তাদররকে কেন্দ্র করে সেসব এলাকায় গড়ে উঠে ইলমী মারকায। প্রচার হতে থাকে ইলমে ওহী। তখন পর্যন্ত মাদরাসার জন্য আলাদা ভবন ছিল না। মসজিদগুলোই ছিল মাদরাসা। মাদরাসার জন্য আলাদা কোন কাঠামো ছিলো না। সে সময় ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার নির্ধারিত কোন সিলেবাস ছিল না। তবে পাঠ্যক্রম ছিলো— কুরআন, হাদীস ও ইলমুল ফিকহ। এসময় পর্যন্ত পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল বর্ণনা ও শ্রুতিনির্ভর। শিক্ষকরা বলতেন। ছাত্ররা শুনতেন। তাছাড়া কাগজ কলমের প্রচলনটাও অতো বেশি ছিলো না। এজন্য মুখস্থ করে রাখাই ছিলো সহজ ও নিরাপদ পদ্ধতি।
ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. এর শাসনকাল। হিজরী প্রথম শতাব্দীর এই সময়টাতে এসে শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আসে। দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত হয় আরো কিছু শাস্ত্র। কুরআন হাসীদ ও ফিকহের সাথে সংযুক্ত হয়— ইতিহাস, মাগাযী, সিয়ার, নাহু, সরফ, দর্শন ইত্যাদি। এযুগেই ইসলামী জ্ঞান ভাণ্ডার লিপিবদ্ধ করার ধারা দুনিয়াজুড়ে ব্যপকতা লাভ করে। তখনও মাদরাসার আলাদা কাঠামো আসেনি। তবে জ্ঞান চর্চার জন্য মসজিদে পৃথক স্থান নির্ধারিত ছিলো।
তৃতীয় শতাব্দীতে শুরু হয় মাদরাসার জন্য আলাদা কাঠামো নির্মাণ। ইসলামী জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয় আলাদা ভবন। মরক্কোর ফস শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামের সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— জামিয়া কারাউয়্যীন। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে জ্ঞানের সুভাস । জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে থাকে শহর নগর থেকে অজপাড়াগাঁও। কালে সেখানে পাঠদান দিয়েছেন ইবনে খালদুন, ইবনে রুশদ, কাজী ইয়াযের মতো খ্যাতিমান মনীষীরা। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একেএকে গড়ে উঠতে থাকে স্বতন্ত্র ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেসময়ে পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত হয় ইলমুত তাফসীর, ইলমুল কালাম, বালাগাত, লুগাত, মায়ানী, চিকিৎসা বিদ্যা, তর্ক শাস্ত্র, গণিত শাস্ত্র, জ্যোতিঃশাস্ত্র ইত্যাদি।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম শতাব্দী থেকেই ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখানেও প্রাথমিক সময়ে মসজিদে পাঠদান হতো। পরবর্তী সময়ে নাসিরুদ্দীন কুচাবাহ সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ৫৮৭ হিজরীতে সিহাবুদ্দীন ঘুরী আজমীর জয় করার পর সেখানে কিছু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে মুসলিম শাসকগণ মাদরাসার প্রতি মনযোগী হয়ে উঠেন। সেসময় প্রতিটা মাদরাসার জন্য প্রশাসনকর্তৃক বিভিন্ন অঞ্চলে বহু ভূমি ওয়াকফ করা হয়। সেসব ভূমির উৎপাদিত ফসল এবং অন্যান্য আয়ের উপর মাদরাসাগুলো চলতো। সরকারি কোন অনুদান ছাড়াই ওয়াকফকৃত ভূমি থেকে আসা অর্থে মাদরাসাগুলো সুন্দরভাবে পরিচালিত হতো। এমনকি সেসব অর্থ থেকে নির্দিষ্ট অংশ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তী সময়ে সিপাহী বিপ্লবের পর ইংরেজরা ভূমি সংস্কারের অজুহাতে মাদরাসাগুলোর জন্য ওয়াকফকৃত ভুমিগুলো বাজেয়াপ্ত করে নেয়। সেসময় অর্থের অভাবে ভারতবর্ষের মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এমনকি দীর্ঘ একটা সময়ের পর ইংরেজদের নানামুখি ষড়যন্ত্রে ইলমে ওহী চর্চার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পুরোপুরি স্তমিত হয়ে যায়। অতপর ১৮৬৬ সালে ভারতবর্ষে মুসলিম জাতির স্বতঃস্ফুর্ত উদ্যোগে আবার শুরু হয় মাদরাসা শিক্ষার ধারা। জাতীয় প্রয়োজনকে সামনে রেখে জাতির সার্বিক কল্যাণ সাধন ও সমস্যাবলির সমাধান, সর্বপরি জাতির ঈমান আকীদা ও সাংস্কৃতি হেফাজতের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসা।
সেই ধারায় সারাবিশ্বে গড়ে ওঠে হাজার হাজার কওমী মাদরাসা। জাতীয় বিদ্যাপীঠ। আমাদের ঈমান, আক্বীদাহ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতি রক্ষার সুদৃঢ় কেল্লা। সেখানে সুনির্মাণ হয় জাতির জন্য নিবেদিত প্রাণ উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী ও সমাজ সংস্কারক। আমাদেরকে উপহার দেয় ফকিহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, পীর, মাশায়েখ, ইমাম, মুজাহিদও মুজাদ্দিদ।

মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০১ অক্টোবর ২০২৫
ইতিহাসের সহস্র পাতা উলটিয়ে আজ স্মরণ করতে চাই নববী যুগের কথা। যখন ধরার বুকে ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দীর্ঘ সাধনার পরে আসমানী আদেশে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ কররেন— 'ইকরা'। পড়ো তোমার প্রভুর নামে। প্রথম সেই পড়া শুরু হয় উঁচু এক পাহাড়ের নির্জন গুহার অভ্যন্তরে। তারপর... মসজিদে নববীর প্রাঙ্গনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিষ্ঠা করেন 'সুফফা'। সাহাবীরা সেখানে পড়ে থাকতেন। জ্ঞান অর্জন করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের সংস্পর্শে ও খোদা প্রদত্ত জ্ঞানের পরশে মানুষ পরিণত হতো উজ্জ্বল নক্ষত্রে। আলো ছড়াতো চারিধারে। সুফফা থেকে ইলমী সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে মদীনার অলিতে-গলিতে। দুনিয়ার আলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আসমানী ইলমের নূর।
হযরত আবু হুরায়রা রা.। সুফফার অন্যতম সদস্য। খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকতেন সুফফায়। জ্ঞান অর্জন করতেন সমুদ্রসম পিপাসা নিয়ে। তিনি দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সুফফায় জ্ঞান অর্জনে আত্মমণ্ন হন। ইলমের জন্য হয়তো তাঁর চেয়ে বেশি কেউ ত্যাগ স্বীকার করেনি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের ইন্তেকালের পর যখন কোন বিষয়ে কথা উঠতো— প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা বলতেন আবু হুরায়রা রা.। যে কোন বিষয়ে যে কোনো সময় আবু হুরায়রা রাযি. শোনাতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমিয় বাণী। সবাই মুগ্ধ হয়ে যেতেন। কেউ কেউ ঈর্ষা করতেন একটুখানি।
একবার হলো কি, কেউ একজন মন্তব্য করে বসলো, সব হাদীস আবু হুরায়রা রা. একাই জানেন নাকি? ঈষৎ রেগে গেলেন আবু হুরায়রা রা.। স্বরটা একটু গম্ভীর করে বললেন, আমি কি তোমাদের মতো ব্যবসা করেছি? আমি কি তোমাদের মতো চাষ করেছি খেতে? আমি তো সর্বক্ষণিক পড়ে ছিলাম রাসূলের সুফফায়। রাসূলের দরবারে। জ্ঞানের সরবরে। সাহবীরা চুপ হয়ে গেলেন। একদম নীরব হয়ে গেলেন সবাই।
যখন আরবের বিভিন্ন অঞ্চল মুসলমানদের করতলগত হতে শুরু হলো। শহরের পর শহর মুসলমানদের শাসনাধীন হতে লাগলো। তখন রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিজিত শহর গুলোতে পাঠিয়ে দিতেন। তাঁরা সেখানে যেতেন শিক্ষক হয়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমরান বিন হুসাইন রাযি.কে পাঠান বসরায়। উবাদা বিন সামেত রাযি.কে হিমসে। মুয়ায বিন জাবাল রাযি.কে ফিলিস্তিনে। আর দামেশকে পাঠান আবু দারতা রাযি.কে। তারা নিজ নিজ অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে শুরু করেন। তাদররকে কেন্দ্র করে সেসব এলাকায় গড়ে উঠে ইলমী মারকায। প্রচার হতে থাকে ইলমে ওহী। তখন পর্যন্ত মাদরাসার জন্য আলাদা ভবন ছিল না। মসজিদগুলোই ছিল মাদরাসা। মাদরাসার জন্য আলাদা কোন কাঠামো ছিলো না। সে সময় ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার নির্ধারিত কোন সিলেবাস ছিল না। তবে পাঠ্যক্রম ছিলো— কুরআন, হাদীস ও ইলমুল ফিকহ। এসময় পর্যন্ত পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল বর্ণনা ও শ্রুতিনির্ভর। শিক্ষকরা বলতেন। ছাত্ররা শুনতেন। তাছাড়া কাগজ কলমের প্রচলনটাও অতো বেশি ছিলো না। এজন্য মুখস্থ করে রাখাই ছিলো সহজ ও নিরাপদ পদ্ধতি।
ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. এর শাসনকাল। হিজরী প্রথম শতাব্দীর এই সময়টাতে এসে শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আসে। দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত হয় আরো কিছু শাস্ত্র। কুরআন হাসীদ ও ফিকহের সাথে সংযুক্ত হয়— ইতিহাস, মাগাযী, সিয়ার, নাহু, সরফ, দর্শন ইত্যাদি। এযুগেই ইসলামী জ্ঞান ভাণ্ডার লিপিবদ্ধ করার ধারা দুনিয়াজুড়ে ব্যপকতা লাভ করে। তখনও মাদরাসার আলাদা কাঠামো আসেনি। তবে জ্ঞান চর্চার জন্য মসজিদে পৃথক স্থান নির্ধারিত ছিলো।
তৃতীয় শতাব্দীতে শুরু হয় মাদরাসার জন্য আলাদা কাঠামো নির্মাণ। ইসলামী জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয় আলাদা ভবন। মরক্কোর ফস শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামের সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— জামিয়া কারাউয়্যীন। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে জ্ঞানের সুভাস । জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে থাকে শহর নগর থেকে অজপাড়াগাঁও। কালে সেখানে পাঠদান দিয়েছেন ইবনে খালদুন, ইবনে রুশদ, কাজী ইয়াযের মতো খ্যাতিমান মনীষীরা। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একেএকে গড়ে উঠতে থাকে স্বতন্ত্র ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেসময়ে পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত হয় ইলমুত তাফসীর, ইলমুল কালাম, বালাগাত, লুগাত, মায়ানী, চিকিৎসা বিদ্যা, তর্ক শাস্ত্র, গণিত শাস্ত্র, জ্যোতিঃশাস্ত্র ইত্যাদি।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম শতাব্দী থেকেই ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখানেও প্রাথমিক সময়ে মসজিদে পাঠদান হতো। পরবর্তী সময়ে নাসিরুদ্দীন কুচাবাহ সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ৫৮৭ হিজরীতে সিহাবুদ্দীন ঘুরী আজমীর জয় করার পর সেখানে কিছু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ধীরে ধীরে মুসলিম শাসকগণ মাদরাসার প্রতি মনযোগী হয়ে উঠেন। সেসময় প্রতিটা মাদরাসার জন্য প্রশাসনকর্তৃক বিভিন্ন অঞ্চলে বহু ভূমি ওয়াকফ করা হয়। সেসব ভূমির উৎপাদিত ফসল এবং অন্যান্য আয়ের উপর মাদরাসাগুলো চলতো। সরকারি কোন অনুদান ছাড়াই ওয়াকফকৃত ভূমি থেকে আসা অর্থে মাদরাসাগুলো সুন্দরভাবে পরিচালিত হতো। এমনকি সেসব অর্থ থেকে নির্দিষ্ট অংশ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তী সময়ে সিপাহী বিপ্লবের পর ইংরেজরা ভূমি সংস্কারের অজুহাতে মাদরাসাগুলোর জন্য ওয়াকফকৃত ভুমিগুলো বাজেয়াপ্ত করে নেয়। সেসময় অর্থের অভাবে ভারতবর্ষের মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এমনকি দীর্ঘ একটা সময়ের পর ইংরেজদের নানামুখি ষড়যন্ত্রে ইলমে ওহী চর্চার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পুরোপুরি স্তমিত হয়ে যায়। অতপর ১৮৬৬ সালে ভারতবর্ষে মুসলিম জাতির স্বতঃস্ফুর্ত উদ্যোগে আবার শুরু হয় মাদরাসা শিক্ষার ধারা। জাতীয় প্রয়োজনকে সামনে রেখে জাতির সার্বিক কল্যাণ সাধন ও সমস্যাবলির সমাধান, সর্বপরি জাতির ঈমান আকীদা ও সাংস্কৃতি হেফাজতের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসা।
সেই ধারায় সারাবিশ্বে গড়ে ওঠে হাজার হাজার কওমী মাদরাসা। জাতীয় বিদ্যাপীঠ। আমাদের ঈমান, আক্বীদাহ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতি রক্ষার সুদৃঢ় কেল্লা। সেখানে সুনির্মাণ হয় জাতির জন্য নিবেদিত প্রাণ উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী ও সমাজ সংস্কারক। আমাদেরকে উপহার দেয় ফকিহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, পীর, মাশায়েখ, ইমাম, মুজাহিদও মুজাদ্দিদ।

আপনার মতামত লিখুন