ঢাকা    বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা    বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
কওমী টাইমস

সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ইউপিডিএফ; তাদের নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনুপ্রবেশ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সেনা ক্যাম্পের দাবি: ইউপিডিএফের ও ভারতীয় যোগসূত্রের অভিযোগ


কওমী টাইমস ডেস্ক
কওমী টাইমস ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সেনা ক্যাম্পের দাবি: ইউপিডিএফের ও ভারতীয় যোগসূত্রের অভিযোগ

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে দ্রুত আড়াইশ নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন সামরিক কর্মকর্তারা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, ইউপিডিএফের সদস্যরা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এবং মিজোরাম ও ত্রিপুরায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং দুর্গম সীমান্ত এলাকায় কার্যকর নজরদারির জন্য এই ক্যাম্পগুলো স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠায়, সেখানে দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা এবং দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইউপিডিএফের বাড়াবাড়ি ও সীমান্তের ওপার থেকে তাদের সহায়তার বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।

ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি ও ভারতীয় সংযোগ

বান্দরবানে দায়িত্ব পালন করা একজন মেজর নিশ্চিত করেছেন, তাদের কাছে ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের তথ্য রয়েছে। তিনি জানান, ইউপিডিএফ সরাসরি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিটি রুট চিহ্নিত করেছে এবং নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হলে যেকোনো স্থানে এক ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত অভিযান চালানো সম্ভব হবে।

রাঙামাটির এক জোন কমান্ডার গোয়েন্দা প্রমাণের ভিত্তিতে দাবি করেন যে, ইউপিডিএফের কমপক্ষে ছয়টি ক্যাম্প ভারতের মিজোরামে অবস্থিত। এই ক্যাম্পগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তিনি মনে করেন, সীমান্ত পাহাড়ে ক্যাম্পের সংখ্যা আড়াইশতে উন্নীত করা ছাড়া এই অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ও অস্ত্রের ব্যবহার

খাগড়াছড়িতে দায়িত্বরত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ জানান, নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। তবে তিনি উল্লেখ করেন, ইউপিডিএফ ধর্ষণের মতো ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দেশীয় এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে ফায়ারিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশের কৌশল অনুযায়ী সামনে এগোতে হবে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান ইউপিডিএফসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভারত থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টিকে জাতীয় শঙ্কা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জোর দেন যে, সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও কার্যকর নজরদারি ছাড়া দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা অসম্ভব। তার মতে, আড়াইশ নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপন এখন একান্ত জরুরি—যা সেনাবাহিনীকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম কার্যকরভাবে দমন করতে সাহায্য করবে।

বিষয় : সেনাবাহিনী

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫


পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সেনা ক্যাম্পের দাবি: ইউপিডিএফের ও ভারতীয় যোগসূত্রের অভিযোগ

প্রকাশের তারিখ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫

featured Image

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে দ্রুত আড়াইশ নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন সামরিক কর্মকর্তারা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, ইউপিডিএফের সদস্যরা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এবং মিজোরাম ও ত্রিপুরায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং দুর্গম সীমান্ত এলাকায় কার্যকর নজরদারির জন্য এই ক্যাম্পগুলো স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠায়, সেখানে দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা এবং দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইউপিডিএফের বাড়াবাড়ি ও সীমান্তের ওপার থেকে তাদের সহায়তার বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।

ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি ও ভারতীয় সংযোগ

বান্দরবানে দায়িত্ব পালন করা একজন মেজর নিশ্চিত করেছেন, তাদের কাছে ইউপিডিএফের চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের তথ্য রয়েছে। তিনি জানান, ইউপিডিএফ সরাসরি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিটি রুট চিহ্নিত করেছে এবং নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হলে যেকোনো স্থানে এক ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত অভিযান চালানো সম্ভব হবে।

রাঙামাটির এক জোন কমান্ডার গোয়েন্দা প্রমাণের ভিত্তিতে দাবি করেন যে, ইউপিডিএফের কমপক্ষে ছয়টি ক্যাম্প ভারতের মিজোরামে অবস্থিত। এই ক্যাম্পগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তিনি মনে করেন, সীমান্ত পাহাড়ে ক্যাম্পের সংখ্যা আড়াইশতে উন্নীত করা ছাড়া এই অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ও অস্ত্রের ব্যবহার

খাগড়াছড়িতে দায়িত্বরত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ জানান, নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। তবে তিনি উল্লেখ করেন, ইউপিডিএফ ধর্ষণের মতো ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দেশীয় এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে ফায়ারিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশের কৌশল অনুযায়ী সামনে এগোতে হবে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান ইউপিডিএফসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভারত থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টিকে জাতীয় শঙ্কা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জোর দেন যে, সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও কার্যকর নজরদারি ছাড়া দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা অসম্ভব। তার মতে, আড়াইশ নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপন এখন একান্ত জরুরি—যা সেনাবাহিনীকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম কার্যকরভাবে দমন করতে সাহায্য করবে।


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত