ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
কওমী টাইমস

গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে লাখো মানুষ; নাগরিক অসন্তোষের মুখে সরকার

ফিলিস্তিন ও সুমুদ ফ্লোটিলার সমর্থনে ইতালিতে বিশাল ধর্মঘট: অচল বন্দর, রেল ও রাজপথ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

ফিলিস্তিন ও সুমুদ ফ্লোটিলার সমর্থনে ইতালিতে বিশাল ধর্মঘট: অচল বন্দর, রেল ও রাজপথ

ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর প্রতি সংহতি এবং ত্রাণবাহী জাহাজ বহর 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'র সমর্থনে ইতালিতে পালিত হয়েছে এক বিশাল সাধারণ ধর্মঘট। দেশের প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন সিজিআইএল (CGIL) এবং অন্যান্য তৃণমূল সংগঠনের ডাকে সারা দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে বন্দর, রেল যোগাযোগ ও প্রধান মহাসড়কগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে জনজীবন ব্যাহত হলেও ধর্মঘটের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কর্মকর্তারা। এই ধর্মঘট ইতালির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভেদ এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার সিজিআইএল ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন তৃণমূল সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইতালির রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি ছিল গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি জানানো।

দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র মিলানে বিক্ষোভের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। সিজিআইএল দাবি করেছে, মিলানের বিক্ষোভে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ অংশ নেয়, যদিও ইতালীয় সংবাদ সংস্থা 'রাই'-এর খবর অনুযায়ী পুলিশের অনুমান ছিল ৫০ হাজারেরও বেশি। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা দুলিয়ে এবং "ফ্রি প্যালেস্টাইন" স্লোগান দিয়ে পিয়াজ্জা লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ভরিয়ে তোলে।

অন্যদিকে, জেনোয়াতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ফেরি টার্মিনাল থেকে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিলে হাঁটে। এছাড়া, ব্রেসিয়াতে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ভিসেনজায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী এ৪ মোটরওয়ের টোল প্লাজা অবরোধ করে। ভেনিসে বিক্ষোভ মিছিল শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে প্রবেশের পথগুলি বন্ধ করে দেয়।

দেশের রাজধানী রোমে, বিক্ষোভকারীরা "গণহত্যা বন্ধ করো, আমরা সবাই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা" ব্যানার নিয়ে পিয়াজ্জা ভিত্তোরিও থেকে তার্মিনি স্টেশন পর্যন্ত মিছিল করে। রোমের প্রধান রেল স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচিতে বাতিল এবং ৮০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্বের খবর পাওয়া যায়।

সমুদ্রবন্দরগুলোতেও পরিস্থিতি ছিল গুরুতর। নেপলসের বন্দর ১০ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। এছাড়া, লিভোর্নো এবং সালের্নোর বন্দরও বিক্ষোভের কারণে অচল হয়ে পড়ে।

সিজিআইএল নেতা মাউরিজিও ল্যান্ডিনি ধর্মঘটকে "সম্পূর্ণ বৈধ" বলে দাবি করেন এবং আগাম নোটিশ না দেওয়ার অভিযোগে ধর্মঘট কর্তৃপক্ষের অবৈধ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, "আমরা ন্যূনতম পরিষেবাগুলির নিশ্চয়তা দিচ্ছি এবং আপিল করব।"

অন্যদিকে, উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি ধর্মঘটকে "বেআইনি" আখ্যা দিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, "যারা অবৈধ ধর্মঘট আয়োজন করে, তাদের ক্ষতির জন্য মূল্য দিতে হবে।" প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রসেত্তো সতর্ক করেন যে বন্দর ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করা ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো "স্বস্তি আনবে না।"

তবে বিরোধী দলের সমর্থনও ছিল জোরালো। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা এলি শ্লেইন রোমের মিছিলে অংশ নিয়ে "ধর্মঘটের অধিকার রক্ষার" আহ্বান জানান। বারির মেয়র ভিতো লেচেসে "যুদ্ধবিরতি, শান্তি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির" দাবি জানান। টাস্কানির গভর্নর ইউজেনিয়ো জিয়ানি বলেন, তার অঞ্চল "শান্তি, মানবতা এবং ন্যায়বিচারের" দাবি করে।

এই প্রতিবাদ কেবল ইতালিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং লিসবনে অবস্থিত ইতালীয় দূতাবাস ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলোর কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দেন। গ্রিসের পাইরিয়াস বন্দরের ডকশ্রমিকরাও কর্মবিরতি পালন করে। গ্রিক ইউনিয়ন পামে (PAME) ঘোষণা করে, "আমরা যুদ্ধযন্ত্রের অংশ হব না। আমরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অপরাধমূলক হামলার নিন্দা জানাই।"

বিষয় : ইতালি

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫


ফিলিস্তিন ও সুমুদ ফ্লোটিলার সমর্থনে ইতালিতে বিশাল ধর্মঘট: অচল বন্দর, রেল ও রাজপথ

প্রকাশের তারিখ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫

featured Image

ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর প্রতি সংহতি এবং ত্রাণবাহী জাহাজ বহর 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'র সমর্থনে ইতালিতে পালিত হয়েছে এক বিশাল সাধারণ ধর্মঘট। দেশের প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন সিজিআইএল (CGIL) এবং অন্যান্য তৃণমূল সংগঠনের ডাকে সারা দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে বন্দর, রেল যোগাযোগ ও প্রধান মহাসড়কগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে জনজীবন ব্যাহত হলেও ধর্মঘটের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কর্মকর্তারা। এই ধর্মঘট ইতালির অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভেদ এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার সিজিআইএল ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন তৃণমূল সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইতালির রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি ছিল গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি জানানো।

দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র মিলানে বিক্ষোভের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। সিজিআইএল দাবি করেছে, মিলানের বিক্ষোভে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ অংশ নেয়, যদিও ইতালীয় সংবাদ সংস্থা 'রাই'-এর খবর অনুযায়ী পুলিশের অনুমান ছিল ৫০ হাজারেরও বেশি। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা দুলিয়ে এবং "ফ্রি প্যালেস্টাইন" স্লোগান দিয়ে পিয়াজ্জা লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ভরিয়ে তোলে।

অন্যদিকে, জেনোয়াতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ফেরি টার্মিনাল থেকে শহরের কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিলে হাঁটে। এছাড়া, ব্রেসিয়াতে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ভিসেনজায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী এ৪ মোটরওয়ের টোল প্লাজা অবরোধ করে। ভেনিসে বিক্ষোভ মিছিল শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে প্রবেশের পথগুলি বন্ধ করে দেয়।

দেশের রাজধানী রোমে, বিক্ষোভকারীরা "গণহত্যা বন্ধ করো, আমরা সবাই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা" ব্যানার নিয়ে পিয়াজ্জা ভিত্তোরিও থেকে তার্মিনি স্টেশন পর্যন্ত মিছিল করে। রোমের প্রধান রেল স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচিতে বাতিল এবং ৮০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্বের খবর পাওয়া যায়।

সমুদ্রবন্দরগুলোতেও পরিস্থিতি ছিল গুরুতর। নেপলসের বন্দর ১০ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। এছাড়া, লিভোর্নো এবং সালের্নোর বন্দরও বিক্ষোভের কারণে অচল হয়ে পড়ে।

সিজিআইএল নেতা মাউরিজিও ল্যান্ডিনি ধর্মঘটকে "সম্পূর্ণ বৈধ" বলে দাবি করেন এবং আগাম নোটিশ না দেওয়ার অভিযোগে ধর্মঘট কর্তৃপক্ষের অবৈধ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, "আমরা ন্যূনতম পরিষেবাগুলির নিশ্চয়তা দিচ্ছি এবং আপিল করব।"

অন্যদিকে, উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি ধর্মঘটকে "বেআইনি" আখ্যা দিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, "যারা অবৈধ ধর্মঘট আয়োজন করে, তাদের ক্ষতির জন্য মূল্য দিতে হবে।" প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রসেত্তো সতর্ক করেন যে বন্দর ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করা ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো "স্বস্তি আনবে না।"

তবে বিরোধী দলের সমর্থনও ছিল জোরালো। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা এলি শ্লেইন রোমের মিছিলে অংশ নিয়ে "ধর্মঘটের অধিকার রক্ষার" আহ্বান জানান। বারির মেয়র ভিতো লেচেসে "যুদ্ধবিরতি, শান্তি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির" দাবি জানান। টাস্কানির গভর্নর ইউজেনিয়ো জিয়ানি বলেন, তার অঞ্চল "শান্তি, মানবতা এবং ন্যায়বিচারের" দাবি করে।

এই প্রতিবাদ কেবল ইতালিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং লিসবনে অবস্থিত ইতালীয় দূতাবাস ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলোর কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দেন। গ্রিসের পাইরিয়াস বন্দরের ডকশ্রমিকরাও কর্মবিরতি পালন করে। গ্রিক ইউনিয়ন পামে (PAME) ঘোষণা করে, "আমরা যুদ্ধযন্ত্রের অংশ হব না। আমরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অপরাধমূলক হামলার নিন্দা জানাই।"


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত