ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ মাদাগাস্কার থেকে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব বিক্ষোভ চলছে। জেনারেশন জেড নামে পরিচিত ২৮ বছরের নিচের এই তরুণরা সরকারি অব্যবস্থা, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একযোগে রাস্তায় নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে তাদের সংগঠনের প্রধান অস্ত্র।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে একযোগে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাদাগাস্কার, কেনিয়া, টোগো ও মরক্কোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছেন মূলত তরুণরা, যারা ‘জেনারেশন জেড’ নামে পরিচিত। তারা অভিযোগ করছেন, বছরের পর বছর ধরে সরকারগুলো জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় লিপ্ত থেকেছে।
মাদাগাস্কার: পানি-বিদ্যুৎ সংকটে ভাঙল সরকার
পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের জেরে গত সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোইলিনা তাঁর সরকার ভেঙে দেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের ডাক শুনেছি, আপনাদের দুর্ভোগ অনুভব করছি।” কিন্তু বিক্ষোভ থামেনি।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী আন্তানানারিভোতে চলা আন্দোলনে পুলিশি দমন–পীড়নে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেডিকেল শিক্ষার্থী ফানিলো বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও হঠাৎ নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায়। অনেকেই সেদিন নিহত হন।” জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ২২ জন মারা গেছেন।
বিক্ষোভকারীরা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন; বরং ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন তারা। প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছেন জাপানি অ্যানিমে ওয়ান পিস–এর জলদস্যু প্রতীক, যা তারা দমনমূলক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে নিয়েছেন।
কেনিয়া: করবিলের বিরুদ্ধে আগুন
পূর্ব আফ্রিকার আরেক দেশ কেনিয়ায় গত বছর থেকে একটি বিতর্কিত অর্থ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। রাজধানী নাইরোবিতে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে কয়েকজন নিহত হন। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর কাছ থেকে কিছু ছাড় আদায় করা হলেও আন্দোলন অব্যাহত আছে। এখানেও তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিক্ষোভ সংগঠিত করছেন।
টোগো: সংবিধান সংশোধন ঠেকাতে আন্দোলন
পশ্চিম আফ্রিকার টোগোতে জুন মাসে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে অনির্দিষ্ট সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন।
মরক্কো: বিশ্বকাপ বনাম জনস্বার্থ
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতেও তরুণরা রাস্তায় নেমেছেন। বুধবার দেশটিতে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। দাবি উঠেছে— ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ না করে সরকার যেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নজর দেয়।
তরুণ প্রজন্মের উত্থান
আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি তরুণ। বিশেষ করে জেনারেশন জেডের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভগুলো কেবল রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়, বরং প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক এই আন্দোলনগুলো মহাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫
ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ মাদাগাস্কার থেকে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব বিক্ষোভ চলছে। জেনারেশন জেড নামে পরিচিত ২৮ বছরের নিচের এই তরুণরা সরকারি অব্যবস্থা, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একযোগে রাস্তায় নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে তাদের সংগঠনের প্রধান অস্ত্র।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে একযোগে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাদাগাস্কার, কেনিয়া, টোগো ও মরক্কোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছেন মূলত তরুণরা, যারা ‘জেনারেশন জেড’ নামে পরিচিত। তারা অভিযোগ করছেন, বছরের পর বছর ধরে সরকারগুলো জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় লিপ্ত থেকেছে।
মাদাগাস্কার: পানি-বিদ্যুৎ সংকটে ভাঙল সরকার
পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের জেরে গত সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোইলিনা তাঁর সরকার ভেঙে দেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের ডাক শুনেছি, আপনাদের দুর্ভোগ অনুভব করছি।” কিন্তু বিক্ষোভ থামেনি।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী আন্তানানারিভোতে চলা আন্দোলনে পুলিশি দমন–পীড়নে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেডিকেল শিক্ষার্থী ফানিলো বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও হঠাৎ নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায়। অনেকেই সেদিন নিহত হন।” জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ২২ জন মারা গেছেন।
বিক্ষোভকারীরা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন; বরং ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন তারা। প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছেন জাপানি অ্যানিমে ওয়ান পিস–এর জলদস্যু প্রতীক, যা তারা দমনমূলক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে নিয়েছেন।
কেনিয়া: করবিলের বিরুদ্ধে আগুন
পূর্ব আফ্রিকার আরেক দেশ কেনিয়ায় গত বছর থেকে একটি বিতর্কিত অর্থ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। রাজধানী নাইরোবিতে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে কয়েকজন নিহত হন। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর কাছ থেকে কিছু ছাড় আদায় করা হলেও আন্দোলন অব্যাহত আছে। এখানেও তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিক্ষোভ সংগঠিত করছেন।
টোগো: সংবিধান সংশোধন ঠেকাতে আন্দোলন
পশ্চিম আফ্রিকার টোগোতে জুন মাসে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে অনির্দিষ্ট সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন।
মরক্কো: বিশ্বকাপ বনাম জনস্বার্থ
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতেও তরুণরা রাস্তায় নেমেছেন। বুধবার দেশটিতে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। দাবি উঠেছে— ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ না করে সরকার যেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নজর দেয়।
তরুণ প্রজন্মের উত্থান
আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি তরুণ। বিশেষ করে জেনারেশন জেডের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভগুলো কেবল রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়, বরং প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক এই আন্দোলনগুলো মহাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে।

আপনার মতামত লিখুন