
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারিত্বকে আইনি রূপ দিতে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট (নেসেট) বুধবার অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্বাঞ্চলীয় জেরুজালেমের কাছে অবস্থিত 'মালয়ে আদুমিম' নামক একটি অবৈধ বসতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্তকরণের দুটি বিলের ওপর প্রাথমিক পাঠে অনুমোদন দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জি ডি ভ্যান্সের তেল আবিব সফরের মধ্যেই এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ নেওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েলি পার্লামেন্টের (নেসেট) ওয়েবসাইট এবং হিব্রু মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, বুধবার এক ভোটাভুটির মাধ্যমে অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের অধীনে আনার একটি বিল প্রাথমিক পাঠে (Preliminary Reading) অনুমোদিত হয়েছে। কট্টর-ডানপন্থী 'নোয়াম' পার্টির নেতা আভি মাওজ কর্তৃক উত্থাপিত বিলটির পক্ষে ২৫ জন এবং বিপক্ষে ২৪ জন নেসেট সদস্য ভোট দেন। ভোটাভুটিতে লিকুদ পার্টির সদস্য ইউলি এডেলস্টেইন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় তা অল্পের জন্য পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লিকুদ দলের পক্ষ থেকে জোটভুক্ত সদস্যদের এই বিলের ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। কারণ প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক, বিশেষত মার্কিন, বিরোধিতার কারণে এই মুহূর্তে এমন পদক্ষেপ নিতে চাননি। জোটের প্রধান অফির কাটজ বলেন, ইসরায়েল এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধকালীন লক্ষ্য, যেমন হামাসকে নির্মূল করা, অর্জনের জন্য সমন্বয় করছে। তাই বিরোধী দলের মাধ্যমে সার্বভৌমত্বের বিষয়টি পরিচালনা করা উচিত নয়।
তবে সরকারের কট্টর-ডানপন্থী অংশ, যেমন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের নেতৃত্বাধীন 'ওৎজমা ইয়েহুদি' এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের নেতৃত্বাধীন 'ধর্মীয় জায়নবাদ' পার্টি এই বিলের প্রতি জোরালো সমর্থন জানায়। তাদের সমর্থনেই বিলটি প্রাথমিক পাঠে পাস হয়। বেন গভির এবং স্মোট্রিচ উভয়েই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ এই ভোটাভুটির পর "সার্বভৌমত্বের সময় এসেছে" বলে মন্তব্য করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পশ্চিম তীরে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের আহ্বান জানান।
পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ বিলের পাশাপাশি 'ইসরায়েল বেইতেইনু' পার্টির প্রধান আভিগডর লিবারম্যান কর্তৃক উত্থাপিত 'মালয়ে আদুমিম' বসতি সংযুক্তিকরণের বিলটিও প্রাথমিক পাঠে অনুমোদন পেয়েছে। ৩১-৯ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয়। জেরুজালেমের পূর্ব দিকে অবস্থিত এই বসতিটি পশ্চিম তীরের বৃহত্তম বসতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটিকে সংযুক্ত করার অর্থ হলো, পূর্ব জেরুজালেম তার ফিলিস্তিনি পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং পশ্চিম তীরও কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে।
উভয় বিল কার্যকর হতে আরও তিনটি অতিরিক্ত পাঠে অনুমোদনের প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক অনুমোদনই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলল। যদি ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে তার সার্বভৌমত্বের অধীনে নিয়ে আসে, তবে তা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের (ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন) সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দেবে, যা জাতিসংঘ প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক নীতি।
এই সংযুক্তিকরণের পাঁয়তারা এমন সময় করা হলো, যখন গত দুই বছর ধরে (৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে) গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত মার্কিন হামলায় ৬৮ হাজার ২৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৩ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এই সংঘাতে গাজার ৯০ শতাংশ বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েল কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া ও লেবাননের অংশবিশেষ দখল করে রেখেছে এবং ১৯৪৮ সালের সীমানার ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে আসছে।
বিষয় : ইসরায়েল
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২২ অক্টোবর ২০২৫
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারিত্বকে আইনি রূপ দিতে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট (নেসেট) বুধবার অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্বাঞ্চলীয় জেরুজালেমের কাছে অবস্থিত 'মালয়ে আদুমিম' নামক একটি অবৈধ বসতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্তকরণের দুটি বিলের ওপর প্রাথমিক পাঠে অনুমোদন দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জি ডি ভ্যান্সের তেল আবিব সফরের মধ্যেই এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ নেওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েলি পার্লামেন্টের (নেসেট) ওয়েবসাইট এবং হিব্রু মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, বুধবার এক ভোটাভুটির মাধ্যমে অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের অধীনে আনার একটি বিল প্রাথমিক পাঠে (Preliminary Reading) অনুমোদিত হয়েছে। কট্টর-ডানপন্থী 'নোয়াম' পার্টির নেতা আভি মাওজ কর্তৃক উত্থাপিত বিলটির পক্ষে ২৫ জন এবং বিপক্ষে ২৪ জন নেসেট সদস্য ভোট দেন। ভোটাভুটিতে লিকুদ পার্টির সদস্য ইউলি এডেলস্টেইন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় তা অল্পের জন্য পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লিকুদ দলের পক্ষ থেকে জোটভুক্ত সদস্যদের এই বিলের ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। কারণ প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক, বিশেষত মার্কিন, বিরোধিতার কারণে এই মুহূর্তে এমন পদক্ষেপ নিতে চাননি। জোটের প্রধান অফির কাটজ বলেন, ইসরায়েল এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধকালীন লক্ষ্য, যেমন হামাসকে নির্মূল করা, অর্জনের জন্য সমন্বয় করছে। তাই বিরোধী দলের মাধ্যমে সার্বভৌমত্বের বিষয়টি পরিচালনা করা উচিত নয়।
তবে সরকারের কট্টর-ডানপন্থী অংশ, যেমন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের নেতৃত্বাধীন 'ওৎজমা ইয়েহুদি' এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের নেতৃত্বাধীন 'ধর্মীয় জায়নবাদ' পার্টি এই বিলের প্রতি জোরালো সমর্থন জানায়। তাদের সমর্থনেই বিলটি প্রাথমিক পাঠে পাস হয়। বেন গভির এবং স্মোট্রিচ উভয়েই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ এই ভোটাভুটির পর "সার্বভৌমত্বের সময় এসেছে" বলে মন্তব্য করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পশ্চিম তীরে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের আহ্বান জানান।
পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ বিলের পাশাপাশি 'ইসরায়েল বেইতেইনু' পার্টির প্রধান আভিগডর লিবারম্যান কর্তৃক উত্থাপিত 'মালয়ে আদুমিম' বসতি সংযুক্তিকরণের বিলটিও প্রাথমিক পাঠে অনুমোদন পেয়েছে। ৩১-৯ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয়। জেরুজালেমের পূর্ব দিকে অবস্থিত এই বসতিটি পশ্চিম তীরের বৃহত্তম বসতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটিকে সংযুক্ত করার অর্থ হলো, পূর্ব জেরুজালেম তার ফিলিস্তিনি পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং পশ্চিম তীরও কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে।
উভয় বিল কার্যকর হতে আরও তিনটি অতিরিক্ত পাঠে অনুমোদনের প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক অনুমোদনই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলল। যদি ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে তার সার্বভৌমত্বের অধীনে নিয়ে আসে, তবে তা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের (ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন) সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দেবে, যা জাতিসংঘ প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক নীতি।
এই সংযুক্তিকরণের পাঁয়তারা এমন সময় করা হলো, যখন গত দুই বছর ধরে (৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে) গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত মার্কিন হামলায় ৬৮ হাজার ২৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৩ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এই সংঘাতে গাজার ৯০ শতাংশ বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েল কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া ও লেবাননের অংশবিশেষ দখল করে রেখেছে এবং ১৯৪৮ সালের সীমানার ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে আসছে।
আপনার মতামত লিখুন