ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
কওমী টাইমস

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল: ‘গণতান্ত্রিক মহাসড়কে ফিরল দেশ’—অ্যাটর্নি জেনারেল


কওমী টাইমস ডেস্ক
কওমী টাইমস ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল: ‘গণতান্ত্রিক মহাসড়কে ফিরল দেশ’—অ্যাটর্নি জেনারেল

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ সুগম হলো বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর রাখার রায় দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলোতে জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে—এটাই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার বড় অর্জন।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের আপিল বিভাগের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। দিনের ভোট রাতে হবে না, মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবে না। এ রকম একটি গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু বলে আমরা মনে করি।”

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ববর্তী রায়কে বাতিল ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো এবং আদালত নির্দেশ দেন—এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরের নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের মন্তব্য ও রায়ের তাৎপর্য

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করার আগের রায়ে বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। তিনি জানান, “আগের রায়টি লেখার সময়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও তাঁর সহযোগীরা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে আমরা শুনানিতে বলেছি।” তাই আদালতের আজকের রায় পূর্ববর্তী অসঙ্গতিগুলো সংশোধন করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিচারপতিদের বেঞ্চ ও শুনানি

এই গুরুত্বপূর্ণ রায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

বহুল আলোচিত এই আপিলে বিএনপির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেই।

পটভূমি: তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ও দীর্ঘ আইনি লড়াই

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত হয়। পরে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন। ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সংসদ পাস করে পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়।

তবে বিএনপি, জামায়াত, পাঁচ নাগরিক এবং একজন ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট আপিল শুনানির লিভ মঞ্জুরের পর ২১ অক্টোবর থেকে শুনানি শুরু হয় এবং টানা ১০ দিনের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

রায়ের ফলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান রাজনৈতিক বিতর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরের নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকর হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়া সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আজকের রায় সেই পথকে আরও মজবুত করেছে।”

রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন মহলে এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, আর রাজনৈতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিষয় : রাজনীতি নির্বাচন বিচার বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫


তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল: ‘গণতান্ত্রিক মহাসড়কে ফিরল দেশ’—অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশের তারিখ : ২০ নভেম্বর ২০২৫

featured Image

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ সুগম হলো বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর রাখার রায় দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলোতে জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে—এটাই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার বড় অর্জন।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের আপিল বিভাগের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। দিনের ভোট রাতে হবে না, মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবে না। এ রকম একটি গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু বলে আমরা মনে করি।”

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ববর্তী রায়কে বাতিল ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো এবং আদালত নির্দেশ দেন—এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরের নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের মন্তব্য ও রায়ের তাৎপর্য

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করার আগের রায়ে বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। তিনি জানান, “আগের রায়টি লেখার সময়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও তাঁর সহযোগীরা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে আমরা শুনানিতে বলেছি।” তাই আদালতের আজকের রায় পূর্ববর্তী অসঙ্গতিগুলো সংশোধন করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিচারপতিদের বেঞ্চ ও শুনানি

এই গুরুত্বপূর্ণ রায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

বহুল আলোচিত এই আপিলে বিএনপির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেই।

পটভূমি: তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ও দীর্ঘ আইনি লড়াই

১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত হয়। পরে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন। ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সংসদ পাস করে পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়।

তবে বিএনপি, জামায়াত, পাঁচ নাগরিক এবং একজন ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট আপিল শুনানির লিভ মঞ্জুরের পর ২১ অক্টোবর থেকে শুনানি শুরু হয় এবং টানা ১০ দিনের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

রায়ের ফলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান রাজনৈতিক বিতর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরের নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকর হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়া সবচেয়ে জরুরি বিষয়। আজকের রায় সেই পথকে আরও মজবুত করেছে।”

রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন মহলে এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, আর রাজনৈতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত