ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
কওমী টাইমস

বিহারের ক্ষমতায় আবারও নীতীশ কুমার: বয়সের চাপ থাকলেও জোটরাজনীতিতে অনিবার্য নেতা

বয়স ও শারীরিক ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হলেও বিহারের রাজনীতিতে নীতীশ কুমারের প্রভাব এখনো অটুট। সদ্য সমাপ্ত রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি সর্বাধিক আসন পেলেও জোট রাজনীতির স্বার্থে আবারও তাঁর ওপরই আস্থা রাখতে হয়েছে। গত দুই দশক ধরে নীতীশ কুমার যেসব জোটে থেকেছেন, সেগুলোই ক্ষমতায় এসেছে—যা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।দশম দফায় মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার সময় নীতীশ কুমারের কণ্ঠ ও আচরণে বয়সের ছাপ ধরা পড়লেও বিহারের রাজনীতিতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন নেই। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে সর্বোচ্চ আসন পাওয়ার পরও জোটের ভারসাম্য রক্ষায় তাঁকেই সামনে আনতে হয়েছে। কারণ, বিহারের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমীকরণে নীতীশ কুমারের উপস্থিতি এখনও অপরিহার্য।২০০৫ সাল থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা নীতীশের মূল শক্তি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রশাসনিক গ্রহণযোগ্যতা এবং জাতপাতনির্ভর বিহারের রাজনীতিতে বিরল সামাজিক ভারসাম্য তৈরি করার সক্ষমতা। বিজেপি ও বাম দলগুলো যেখানে ক্যাডার রাজনীতিতে নির্ভরশীল, আরজেডি ভরসা রাখে তাদের ঐতিহ্যগত মুসলিম-ইয়াদব ভোটব্যাংকে; সেখানে নীতীশ কুমার কুর্মি-কৈরি গোষ্ঠীর পাশাপাশি অতি পশ্চাৎপদ জাতি, মহাদলিত ও নারী ভোটারদের এক প্ল্যাটফর্মে এনেছেন। এই বিস্তৃত সামাজিক সমর্থনই তাঁকে বারবার ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।বিশেষ করে নারীদের জন্য সাইকেল, ইউনিফর্ম, স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন এবং আর্থিক সহায়তার মতো প্রকল্প নীতীশের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে। দুই প্রজন্ম ধরে নারী ভোটারদের এ আস্থা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।বিহারের সামাজিক কাঠামোতেও তিনি এনেছেন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। তাঁর উদ্যোগে সম্পন্ন হওয়া জাতিগত জনগণনা বিভিন্ন গোষ্ঠীর জনসংখ্যার হিসাব স্পষ্ট করেছে—যা নীতি নির্ধারণে নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে। এই বাস্তবতা জোটের ভেতর নীতীশের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের ঠিক পরেই তাঁকে সরানোর ঝুঁকি নিতে চাইবে না বিজেপি। সামনে আরও কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে, এমন অবস্থায় নেতৃত্ব পরিবর্তনের বার্তা অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।তবে সমালোচনাও কম নেই। মানব উন্নয়ন সূচকে বিহার শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর একটি। তা সত্ত্বেও ২০২৫ সালের নির্বাচনে বড় ধরনের বিরোধীতা বা অ্যান্টি-ইনকামবেন্সির ঢেউ দেখা যায়নি। বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা—উন্নয়ন সূচকে দুর্বলতা থাকলেও সামাজিক সহায়তা ও নারীভিত্তিক প্রকল্পগুলো ভোটের ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখে। এবারও লাখ লাখ নারীর অ্যাকাউন্টে আর্থিক সহায়তা পৌঁছানোর ঘটনাকে অনেকে সেই প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। সব মিলিয়ে বয়স ও শারীরিক দুর্বলতা স্পষ্ট হলেও বিহারের সমীকরণে নীতীশ কুমারের বিকল্প এখনো গড়ে ওঠেনি। বিজেপির কাছেও তিনি জোটের সবচেয়ে কার্যকর, গ্রহণযোগ্য ও রাজনৈতিকভাবে প্রয়োজনীয় নেতা। তাই নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নীতীশ কুমারই হয়ে উঠেছেন এনডিএ-র অনিবার্য মুখ—এবং বিহারের রাজনীতি এখনো তাঁকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।

বিহারের ক্ষমতায় আবারও নীতীশ কুমার: বয়সের চাপ থাকলেও জোটরাজনীতিতে অনিবার্য নেতা