অর্থসংকটে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বড় কাটছাঁট, সেনা-পুলিশের এক-চতুর্থাংশ ফিরছে দেশে
অর্থসংকট ও যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া তহবিলের জেরে বড় সংকটে পড়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম। বিশ্বব্যাপী নয়টি মিশনে সেনা ও পুলিশের সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এতে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার শান্তিরক্ষীকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
বিশ্বজুড়ে চলমান শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে জাতিসংঘ (ইউএন)। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এবং তীব্র বাজেট ঘাটতির কারণে সংস্থাটি নয়টি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে এক-চতুর্থাংশ সেনা ও পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স একাধিক জাতিসংঘ কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমাদের মোট শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রায় ২৫ শতাংশকে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি সরঞ্জাম, যানবাহন ও বিপুলসংখ্যক বেসামরিক কর্মীর ওপরও এর প্রভাব পড়বে।”জাতিসংঘের হিসাবে, এতে অন্তত ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হবে।শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর সবচেয়ে বড় অর্থদাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তারা এককভাবে মোট তহবিলের ২৬ শতাংশেরও বেশি যোগান দেয়, যেখানে চীন সরবরাহ করে প্রায় ২৪ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া তহবিল দ্রুত বেড়ে গেছে।আরেক কর্মকর্তা জানান, নতুন অর্থবছর শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি ডলার, এবং অতিরিক্ত আরও ১৩০ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে—মোট বকেয়া প্রায় ২৮০ কোটি ডলার।এই আর্থিক অনিশ্চয়তার পেছনে মূল কারণ মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্টে ২০২৪ ও ২০২৫ অর্থবছরের জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা তহবিল থেকে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) ডলার একতরফাভাবে বাতিল করেন। হোয়াইট হাউজের বাজেট দপ্তর ২০২৬ সালের জন্যও অর্থায়ন স্থগিতের প্রস্তাব দিয়েছে, যার যুক্তি হিসেবে তারা মালি, লেবানন ও কঙ্গোর মিশনের ‘ব্যর্থতা’ উল্লেখ করেছে।জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তে যেসব মিশন সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, লেবানন, কসোভো, সাইপ্রাস, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ওয়েস্টার্ন সাহারা, ইসরায়েল-সিরিয়ার মধ্যবর্তী গোলান মালভূমি ও সুদান-দক্ষিণ সুদানের যৌথ প্রশাসনিক এলাকা আবেই।জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাজেট সংকোচনের ফলে শুধু মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা কার্যক্রমই নয়, বরং মানবিক সহায়তা, নারী ও শিশু সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের এই কঠিন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় নতুন এক অনিশ্চয়তার সূচনা করল।