হুমকি দূরীকরণের অজুহাতে রাফায় ইসরায়েলি বিমান ও গোলন্দাজ হামলা: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ হামাসের
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ এলাকায় বিমান ও গোলন্দাজ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, "হুমকি দূর করতে" এবং সুড়ঙ্গের মুখ ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করতে এই হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে, হামাস এবং এর সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তাদের পূর্ণ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ইসরায়েলকেই চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করেছে। এই ঘটনায় নেতানিয়াহু একটি জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং গাজায় কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন।রবিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকায় বিমান ও গোলন্দাজ হামলা চালায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত প্রকৌশল যানের দিকে সন্ত্রাসীরা ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে এবং গুলি করেছে। আইডিএফ আরও দাবি করে, "হুমকি দূর করতে" রাফাহ এলাকায় বিমান ও গোলন্দাজ হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে বেশ কয়েকটি "অপারেশনাল সুড়ঙ্গের মুখ" এবং সামরিক ভবন ধ্বংস হয়েছে, যেখানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তারা সতর্ক করে দেয় যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির কোনো সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হলে আইডিএফ "শক্তিশালীভাবে" জবাব দেবে।ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানায়, হামাসের যোদ্ধাদের সাথে গোলাগুলির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তবে হামাসের নেতা ইজ্জাত আল-রাশক এক বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি ইসরায়েলকেই চুক্তি লঙ্ঘনের এবং "তাদের অপরাধের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য দুর্বল অজুহাত তৈরির" জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চুক্তি অস্বীকার করার প্রচেষ্টা তাঁর চরমপন্থী জোটের চাপের ফল।হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডও এক বিবৃতিতে চুক্তির সকল শর্ত মেনে চলার "পূর্ণ অঙ্গীকার" ব্যক্ত করে এবং দাবি করে যে রাফাহতে কোনো ঘটনা বা সংঘর্ষের ব্যাপারে তাদের কোনো "ধারণা নেই"। তারা আরও জানায় যে রাফাহ এলাকাটি "রেড জোন" হিসেবে দখলদারিত্বের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পৃথক এক বিবৃতিতে জানায় যে, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর নেতানিয়াহু একটি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং এরপরে গাজায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে "কঠোর পদক্ষেপের" নির্দেশ দিয়েছেন। ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎসের মধ্যে নিরাপত্তা আলোচনা উল্লেখযোগ্য কোনো ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। একজন উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় হামলার নতুন ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎস কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হামাসকে আজ একটি কঠিন শিক্ষা দেওয়া হবে যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের সৈন্যদের রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তিনি যোগ করেন, হামাসকে প্রতিটি গুলি চালানো এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য "অনেক চড়া মূল্য" দিতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় পূর্ণ শক্তিতে লড়াই পুনরায় শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।গাজা সরকারের তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে, শুধুমাত্র শনিবার পর্যন্ত ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ৪৭ বার লঙ্ঘন করেছে। এতে ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন।উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর ২০২৫ থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হয়েছিল। চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময়, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও মানবিক সহায়তা পুনরায় চালুর কথা ছিল।
কিন্তু এই চুক্তি সত্ত্বেও, যুদ্ধবিরতি পরবর্তী সময়েই রাফা আবার পরিণত হয়েছে নতুন রণক্ষেত্রে—যেখানে ধ্বংসস্তূপ, আতঙ্ক, আর ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে উঠছে।ইসরায়েলের এই গণহত্যা ৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে শুরু হয়েছিল, যাতে এখন পর্যন্ত ৬৮,১৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৭০,২০৩ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এই পরিস্থিতিতে ৪৬৩ জন ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ১৫৭টি শিশু, অনাহারে মারা গেছেন।