ইসরায়েলি সংবাদপত্র 'মা'আরিভ'-এ প্রকাশিত এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের শান্তি চুক্তির পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েল ও মিশরের সম্পর্কে নজিরবিহীন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দোহা-তে ইসরায়েলি হামলার নির্দেশ এবং মিশরীয় ভূখণ্ড থেকে আসা লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলি চালানোর নির্দেশ সংক্রান্ত খবর এই উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনটি ইঙ্গিত করে যে ইসরায়েলি সরকার এবং তার নেতা মিশরের সাথে "বিপজ্জনক খেলা" খেলছেন, যা দুই দেশের কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা 'মা'আরিভ'-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-মিশর সম্পর্ক গত দুই বছরে তীব্র চাপের মুখে রয়েছে। যদিও মিশর এতকাল কৌশলগত স্বার্থের কারণে শান্তি চুক্তি বজায় রেখেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এবং ইসরায়েলি পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিশর দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের আচরণের সামান্য সমালোচনা করে কূটনৈতিক সংযম দেখিয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও এই সংযম সম্পর্কে অবগত। তবুও, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে 'স্বেচ্ছামূলক অভিবাসনে' মিশরের সহায়তার জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনা, এমনকি ঋণ বাতিলের প্রস্তাবও দিয়েছিল। তবে মিশর এই প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুকে নির্মূল করার ইসরায়েলি প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।সাম্প্রতিককালে, কায়রো ইসরায়েলের নতুন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগে সম্মতি দেয়নি এবং তেল আবিবে নতুন রাষ্ট্রদূতও পাঠায়নি—যা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক শীতলতার বহিঃপ্রকাশ।সম্পর্ক আরও খারাপ হয় যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং জ্বালানি মন্ত্রী কোহেন মিশরের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিশাল গ্যাস চুক্তি পর্যালোচনা করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে এই খবর ফাঁস হয়। মিশর নাকি শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করছে—এই অজুহাতে এই পর্যালোচনা শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়।'মা'আরিভ'-এর মতে, অর্থনৈতিক সংকটে থাকা এবং জ্বালানি ঘাটতিতে ভোগা মিশরের জন্য এই গ্যাস চুক্তিটি অত্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েল সম্ভবত মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে বোঝাতে চেয়েছিল যে ইসরায়েলের হাতে মিশরের অর্থনীতিতে আঘাত হানার মতো কার্যকর চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার রয়েছে।প্রতিবেদনটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে এই ইসরায়েলি পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। মিশরীয় অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে—ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে সুয়েজ খাল থেকে রাজস্ব কমে যাওয়া, পর্যটন হ্রাস এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ঘাটতির কারণে।'মা'আরিভ' সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হিসেবে জানিয়েছে, আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট সিসি ইসরায়েলকে 'শত্রু' (Enemy) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১৯৭৯ সালের শান্তি চুক্তির পর এই প্রথম কোনো মিশরীয় প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে এমন শব্দে সম্বোধন করলেন। প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সরকার এবং তার নেতা মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে শান্তি চুক্তির গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করে "বিপজ্জনক খেলা" খেলছেন।