
দেশের মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় দুর্ধর্ষ ডাকাতচক্র। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তত এক হাজার ৪৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত তিনটি বড় গ্রুপ মহাসড়কে ডাকাতি চালাচ্ছে। যাত্রীদের টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটের পাশাপাশি খুন ও ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধেও জড়িত এসব চক্র।
হাইওয়ে পুলিশের একটি বিশেষ ডেটাবেস অনুযায়ী, দেশের মহাসড়কগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এক হাজার ৪৩ জন সদস্যের ডাকাতচক্র। এরা মূলত তিনটি বড় গ্রুপে বিভক্ত—‘আরজু ডাকাতদল’, ‘কৃষ্ণকলি ডাকাতদল’ ও ‘মারদাঙ্গা ডাকাতদল’। প্রত্যেক গ্রুপে সাত থেকে আটজন করে সক্রিয় ডাকাত থাকলেও, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য সহযোগী ও সংযোগকারী।
পুলিশের তথ্য বলছে, এ চক্রগুলো সমন্বিতভাবে ডাকাতি করে। তারা মূলত মহাসড়কের নির্জন এলাকায় যাত্রীবাহী বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে যাত্রীদের ওপর হামলা চালাতে বা খুন করতেও দ্বিধা করে না। নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনাতেও এ চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
আরজু ডাকাতদল: উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোয় সক্রিয়।
কৃষ্ণকলি ডাকাতদল: খুলনা অঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ করে।
মারদাঙ্গা ডাকাতদল: চট্টগ্রাম অঞ্চলে কার্যক্রম চালায়। এ চক্র প্রবাসীদের বিশেষভাবে টার্গেট করে। বিমানবন্দর থেকে গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে প্রবাসীদের পথে আটকে লুট করে থাকে। অনেক সময় ডিবি বা র্যাবের পোশাক পরে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা।
২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার জগ্ননাথ দীঘি এলাকায় বাস ডাকাতির চেষ্টা চালায় সাত-আটজনের একটি দল। যাত্রীরা দুইজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলে তাদের কৃষ্ণকলি দলের সদস্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী এক যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির সময় দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে মহাসড়ক ডাকাতির ঘটনায় ৫৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, সিলেটে ১৬, ময়মনসিংহে আট, রংপুরে ১০, বগুড়ায় তিন, মাদারীপুরে দুটি এবং গাজীপুরে একটি মামলা হয়। এসব মামলায় প্রায় ১০০ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের ডেটাবেসে ডাকাতচক্রের সদস্যদের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আগের পেশা, মামলার সংখ্যা ও গ্রেপ্তারের তথ্য সংরক্ষিত আছে। তালিকায় ঢাকার চানপাড়া এলাকার কাওছার আহমেদ, ঝালকাঠির আরিফ হোসেন, বরিশালের আব্দুল হাকিম, হবিগঞ্জের আবু তালেক, চট্টগ্রামের রৌশনুজ্জামানসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে হাইওয়ে পুলিশকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। নতুন ৩২টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং নির্জন এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত আইজিপি ও হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, “মহাসড়কে আমাদের টহল বেড়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন-রাত কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।”
দেশের মহাসড়কজুড়ে ডাকাতচক্রের কার্যক্রম আংশিক ভেঙে গেলেও এখনো হুমকি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া মহাসড়ককে নিরাপদ করা কঠিন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দেশের মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় দুর্ধর্ষ ডাকাতচক্র। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তত এক হাজার ৪৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত তিনটি বড় গ্রুপ মহাসড়কে ডাকাতি চালাচ্ছে। যাত্রীদের টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটের পাশাপাশি খুন ও ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধেও জড়িত এসব চক্র।
হাইওয়ে পুলিশের একটি বিশেষ ডেটাবেস অনুযায়ী, দেশের মহাসড়কগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এক হাজার ৪৩ জন সদস্যের ডাকাতচক্র। এরা মূলত তিনটি বড় গ্রুপে বিভক্ত—‘আরজু ডাকাতদল’, ‘কৃষ্ণকলি ডাকাতদল’ ও ‘মারদাঙ্গা ডাকাতদল’। প্রত্যেক গ্রুপে সাত থেকে আটজন করে সক্রিয় ডাকাত থাকলেও, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য সহযোগী ও সংযোগকারী।
পুলিশের তথ্য বলছে, এ চক্রগুলো সমন্বিতভাবে ডাকাতি করে। তারা মূলত মহাসড়কের নির্জন এলাকায় যাত্রীবাহী বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে যাত্রীদের ওপর হামলা চালাতে বা খুন করতেও দ্বিধা করে না। নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনাতেও এ চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
আরজু ডাকাতদল: উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোয় সক্রিয়।
কৃষ্ণকলি ডাকাতদল: খুলনা অঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ করে।
মারদাঙ্গা ডাকাতদল: চট্টগ্রাম অঞ্চলে কার্যক্রম চালায়। এ চক্র প্রবাসীদের বিশেষভাবে টার্গেট করে। বিমানবন্দর থেকে গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে প্রবাসীদের পথে আটকে লুট করে থাকে। অনেক সময় ডিবি বা র্যাবের পোশাক পরে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা।
২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার জগ্ননাথ দীঘি এলাকায় বাস ডাকাতির চেষ্টা চালায় সাত-আটজনের একটি দল। যাত্রীরা দুইজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলে তাদের কৃষ্ণকলি দলের সদস্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী এক যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির সময় দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে মহাসড়ক ডাকাতির ঘটনায় ৫৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, সিলেটে ১৬, ময়মনসিংহে আট, রংপুরে ১০, বগুড়ায় তিন, মাদারীপুরে দুটি এবং গাজীপুরে একটি মামলা হয়। এসব মামলায় প্রায় ১০০ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের ডেটাবেসে ডাকাতচক্রের সদস্যদের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আগের পেশা, মামলার সংখ্যা ও গ্রেপ্তারের তথ্য সংরক্ষিত আছে। তালিকায় ঢাকার চানপাড়া এলাকার কাওছার আহমেদ, ঝালকাঠির আরিফ হোসেন, বরিশালের আব্দুল হাকিম, হবিগঞ্জের আবু তালেক, চট্টগ্রামের রৌশনুজ্জামানসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে হাইওয়ে পুলিশকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। নতুন ৩২টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং নির্জন এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত আইজিপি ও হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, “মহাসড়কে আমাদের টহল বেড়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন-রাত কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।”
দেশের মহাসড়কজুড়ে ডাকাতচক্রের কার্যক্রম আংশিক ভেঙে গেলেও এখনো হুমকি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া মহাসড়ককে নিরাপদ করা কঠিন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন