ঢাকা    বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা    বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
কওমী টাইমস

সেনাভর্তি এড়াতে বিক্ষোভ, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ও বোতল নিক্ষেপ;

সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের প্রতিবাদে উত্তাল পশ্চিম জেরুজালেম


আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের প্রতিবাদে উত্তাল পশ্চিম জেরুজালেম

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্তির বিরোধিতা করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিম জেরুজালেমের রাজপথ। অতি-অর্থোডক্স ইহুদিদের (হেরেদিম) বিক্ষোভ দমাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। এই সংঘাত এমন এক সময়ে ঘটল যখন আদালতের নির্দেশে হারেদিমদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা শুরু করার চাপ বাড়ছে, এবং একইসঙ্গে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি অর্থ সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।

জেরুজালেমের ইয়াহেযকেল স্ট্রিট এলাকায় সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার ইসরায়েলি পুলিশের দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, এই প্রতিবাদ দ্রুতই অশান্ত হয়ে ওঠে এবং রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচল ব্যাহত করে। পুলিশ জানিয়েছে, "কয়েক ডজন হারেদিম বিক্ষোভকারী যানবাহন ও বাসের গতি রোধ করে পথচারীদের বিপন্ন করে তোলে। তারা আবর্জনার পাত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ও বোতল নিক্ষেপ করে।"

সংঘর্ষে এক নারী পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। তবে তার আঘাতের মাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। বিক্ষোভকারীরা তা অমান্য করায় পুলিশ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সরাতে বাধ্য হয়।

ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা মঙ্গলবার জানিয়েছে, সেনা পরিষেবা এড়িয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন হারেদিমকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাতভর বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালতের গত ২৫ জুন ২০২৪-এর একটি সিদ্ধান্তের পর থেকেই হারেদিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

আদালত হারেদিমদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে এবং একইসঙ্গে যে সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (ইয়েশিভা) ছাত্ররা সামরিক পরিষেবা দিতে অস্বীকার করবে, তাদের জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

হারেদিম সমাজের প্রবীণ রাবাইরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের ধর্মীয় ফতোয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ার জন্য অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এবং সামরিক সমনের নির্দেশ 'ছিঁড়ে ফেলার' কথাও বলা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রায় ১০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে হারেদিম সম্প্রদায়ের হার প্রায় ১৩ শতাংশ। তারা ঐতিহ্যগতভাবে ১৮ বছর বয়স থেকে সামরিক পরিষেবা এড়িয়ে চলেন এই যুক্তিতে যে তারা নিজেদের জীবন তওরাত (Torah) অধ্যয়নে নিবেদিত করতে চান। তারা মনে করেন ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে মিশে যাওয়া তাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং সমাজের ধারাবাহিকতার জন্য হুমকি। 

দীর্ঘদিন ধরে, ১৮ বছর বয়সে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের অজুহাতে বারবার স্থগিতাদেশ নিয়ে তারা সামরিক পরিষেবা এড়িয়ে গেছেন, যতক্ষণ না তারা বর্তমানে ২৬ বছর বয়সে পৌঁছানোর কারণে অব্যাহতি পেয়েছেন।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর হারেদিম দলগুলোর পক্ষ থেকে এই অব্যাহতি বহাল রাখার জন্য আইন প্রণয়নের চাপ রয়েছে। বিরোধী দলগুলো নেতানিয়াহুকে এমন একটি আইন পাসে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করছে যা হারেদিমদের সেনা ভর্তি থেকে ছাড় দেবে। শ্যাস এবং ইয়েহদুত হাতোরাহ দল, যারা এই বছরের শুরুতে সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, তারা এমন আইন পাস হলেই সরকারে ফিরতে প্রস্তুত।

বিষয় : ইসরায়েল ইহুদি

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫


সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের প্রতিবাদে উত্তাল পশ্চিম জেরুজালেম

প্রকাশের তারিখ : ২১ অক্টোবর ২০২৫

featured Image

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্তির বিরোধিতা করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিম জেরুজালেমের রাজপথ। অতি-অর্থোডক্স ইহুদিদের (হেরেদিম) বিক্ষোভ দমাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। এই সংঘাত এমন এক সময়ে ঘটল যখন আদালতের নির্দেশে হারেদিমদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা শুরু করার চাপ বাড়ছে, এবং একইসঙ্গে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি অর্থ সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।

জেরুজালেমের ইয়াহেযকেল স্ট্রিট এলাকায় সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার ইসরায়েলি পুলিশের দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, এই প্রতিবাদ দ্রুতই অশান্ত হয়ে ওঠে এবং রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচল ব্যাহত করে। পুলিশ জানিয়েছে, "কয়েক ডজন হারেদিম বিক্ষোভকারী যানবাহন ও বাসের গতি রোধ করে পথচারীদের বিপন্ন করে তোলে। তারা আবর্জনার পাত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ও বোতল নিক্ষেপ করে।"

সংঘর্ষে এক নারী পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। তবে তার আঘাতের মাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। বিক্ষোভকারীরা তা অমান্য করায় পুলিশ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সরাতে বাধ্য হয়।

ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা মঙ্গলবার জানিয়েছে, সেনা পরিষেবা এড়িয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন হারেদিমকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাতভর বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালতের গত ২৫ জুন ২০২৪-এর একটি সিদ্ধান্তের পর থেকেই হারেদিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

আদালত হারেদিমদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে এবং একইসঙ্গে যে সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (ইয়েশিভা) ছাত্ররা সামরিক পরিষেবা দিতে অস্বীকার করবে, তাদের জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

হারেদিম সমাজের প্রবীণ রাবাইরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের ধর্মীয় ফতোয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ার জন্য অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এবং সামরিক সমনের নির্দেশ 'ছিঁড়ে ফেলার' কথাও বলা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রায় ১০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে হারেদিম সম্প্রদায়ের হার প্রায় ১৩ শতাংশ। তারা ঐতিহ্যগতভাবে ১৮ বছর বয়স থেকে সামরিক পরিষেবা এড়িয়ে চলেন এই যুক্তিতে যে তারা নিজেদের জীবন তওরাত (Torah) অধ্যয়নে নিবেদিত করতে চান। তারা মনে করেন ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে মিশে যাওয়া তাদের ধর্মীয় পরিচয় এবং সমাজের ধারাবাহিকতার জন্য হুমকি। 

দীর্ঘদিন ধরে, ১৮ বছর বয়সে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের অজুহাতে বারবার স্থগিতাদেশ নিয়ে তারা সামরিক পরিষেবা এড়িয়ে গেছেন, যতক্ষণ না তারা বর্তমানে ২৬ বছর বয়সে পৌঁছানোর কারণে অব্যাহতি পেয়েছেন।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর হারেদিম দলগুলোর পক্ষ থেকে এই অব্যাহতি বহাল রাখার জন্য আইন প্রণয়নের চাপ রয়েছে। বিরোধী দলগুলো নেতানিয়াহুকে এমন একটি আইন পাসে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করছে যা হারেদিমদের সেনা ভর্তি থেকে ছাড় দেবে। শ্যাস এবং ইয়েহদুত হাতোরাহ দল, যারা এই বছরের শুরুতে সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, তারা এমন আইন পাস হলেই সরকারে ফিরতে প্রস্তুত।


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত