
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও চুক্তিতে সম্মত হওয়া শর্ত অনুযায়ী ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ নিয়ে গুরুতর অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। গাজার সরকার পক্ষ জানিয়েছে, চুক্তি অনুসারে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ ট্রাক প্রবেশ করেছে। এই পরিস্থিতি গাজার ২.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য চলমান মানবিক সংকট ও অনাহারকে আরও তীব্র করে তুলছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই অপ্রতুল ত্রাণ সরবরাহকে 'অবরোধ, অনাহার ও মানবিক জিম্মি করার নীতি'র প্রতিফলন বলে মনে করছে।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু সূত্রে জানা যায়, গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সোমবার (২০ অক্টোবর, ২০২৫) সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৬,৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু এর বিপরীতে, মাত্র ৯৮৬টি মানবিক সাহায্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় দৈনিক গড়ে ৮৯টির বেশি ট্রাক প্রবেশ করছে না, যা চুক্তিতে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
সরকারি কার্যালয় এটিকে গাজার ২.৪ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে 'অবরোধ, অনাহার এবং মানবিক জিম্মি করার নীতির ধারাবাহিকতা' বলে আখ্যায়িত করেছে।
গাজা সরকারের দাবি, এই সীমিত পরিমাণ সাহায্য সেখানকার মানুষের ন্যূনতম মানবিক ও জীবনধারণের চাহিদা মেটাতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। তাদের মতে, ন্যূনতম জীবনধারণ নিশ্চিত করতে খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, জরুরি ত্রাণ, জ্বালানি এবং রান্নার গ্যাসের সহায়ক সরবরাহের জন্য দৈনিক অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের নিয়মিত প্রবেশ জরুরি।
এদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'খাদ্য সংকটের কার্ড ব্যবহার করে রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্ল্যাকমেইল করার' অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, দখলদার শক্তি গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অনাহারের নীতি ত্যাগ করেনি।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর জ্যেষ্ঠ জরুরি সমন্বয়কারী হ্যামিশ ইয়ং গত শুক্রবার আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার পরিস্থিতিকে 'বিপর্যয়কর' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি উত্তর গাজার অনাহারের প্রভাব মোকাবিলায় ইউনিসেফের জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলের গণহত্যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে গাজায় সুপরিকল্পিত অনাহারের নীতি প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে ৪৬৩ জন ফিলিস্তিনি—যার মধ্যে ১৫৭ জন শিশু—প্রাণ হারান। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সামান্য পরিমাণে মানবিক সহায়তা পৌঁছালেও তা অনাহার দূর করতে বা এর প্রভাব মোকাবিলা করতে যথেষ্ট নয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দুই বছরের ইসরায়েলি আক্রমণে গাজার ফিলিস্তিনিরা 'দরিদ্র' শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৮,২১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৭০,৩৬১ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এছাড়া গাজার ৯০ শতাংশ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২১ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও চুক্তিতে সম্মত হওয়া শর্ত অনুযায়ী ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ নিয়ে গুরুতর অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। গাজার সরকার পক্ষ জানিয়েছে, চুক্তি অনুসারে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ ট্রাক প্রবেশ করেছে। এই পরিস্থিতি গাজার ২.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য চলমান মানবিক সংকট ও অনাহারকে আরও তীব্র করে তুলছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই অপ্রতুল ত্রাণ সরবরাহকে 'অবরোধ, অনাহার ও মানবিক জিম্মি করার নীতি'র প্রতিফলন বলে মনে করছে।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু সূত্রে জানা যায়, গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সোমবার (২০ অক্টোবর, ২০২৫) সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৬,৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু এর বিপরীতে, মাত্র ৯৮৬টি মানবিক সাহায্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় দৈনিক গড়ে ৮৯টির বেশি ট্রাক প্রবেশ করছে না, যা চুক্তিতে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
সরকারি কার্যালয় এটিকে গাজার ২.৪ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে 'অবরোধ, অনাহার এবং মানবিক জিম্মি করার নীতির ধারাবাহিকতা' বলে আখ্যায়িত করেছে।
গাজা সরকারের দাবি, এই সীমিত পরিমাণ সাহায্য সেখানকার মানুষের ন্যূনতম মানবিক ও জীবনধারণের চাহিদা মেটাতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। তাদের মতে, ন্যূনতম জীবনধারণ নিশ্চিত করতে খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, জরুরি ত্রাণ, জ্বালানি এবং রান্নার গ্যাসের সহায়ক সরবরাহের জন্য দৈনিক অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের নিয়মিত প্রবেশ জরুরি।
এদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'খাদ্য সংকটের কার্ড ব্যবহার করে রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্ল্যাকমেইল করার' অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, দখলদার শক্তি গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অনাহারের নীতি ত্যাগ করেনি।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর জ্যেষ্ঠ জরুরি সমন্বয়কারী হ্যামিশ ইয়ং গত শুক্রবার আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার পরিস্থিতিকে 'বিপর্যয়কর' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি উত্তর গাজার অনাহারের প্রভাব মোকাবিলায় ইউনিসেফের জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলের গণহত্যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে গাজায় সুপরিকল্পিত অনাহারের নীতি প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে ৪৬৩ জন ফিলিস্তিনি—যার মধ্যে ১৫৭ জন শিশু—প্রাণ হারান। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সামান্য পরিমাণে মানবিক সহায়তা পৌঁছালেও তা অনাহার দূর করতে বা এর প্রভাব মোকাবিলা করতে যথেষ্ট নয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দুই বছরের ইসরায়েলি আক্রমণে গাজার ফিলিস্তিনিরা 'দরিদ্র' শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৮,২১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৭০,৩৬১ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এছাড়া গাজার ৯০ শতাংশ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন