{ "@context": "https://schema.org", "@graph": [ { "@type": "Organization", "@id": "https://qawmitimes.com/#organization", "name": "QawmiTimes", "url": "https://qawmitimes.com/", "logo": { "@type": "ImageObject", "url": "https://qawmitimes.com/path/to/logo.png", "width": 600, "height": 60 }, "sameAs": [ "https://www.facebook.com/qawmitimes", "https://twitter.com/qawmitimes" ] }, { "@type": "WebSite", "@id": "https://qawmitimes.com/#website", "url": "https://qawmitimes.com/", "name": "QawmiTimes", "publisher": { "@id": "https://qawmitimes.com/#organization" }, "potentialAction": { "@type": "SearchAction", "target": "https://qawmitimes.com/?s={search_term_string}", "query-input": "required name=search_term_string" } }, { "@type": "WebPage", "@id": "{{PAGE_URL}}#webpage", "url": "{{PAGE_URL}}", "inLanguage": "bn‑BD", "name": "{{PAGE_TITLE}}", "isPartOf": { "@id": "https://qawmitimes.com/#website" }, "about": { "@id": "https://qawmitimes.com/#organization" }, "datePublished": "{{DATE_PUBLISHED}}", "dateModified": "{{DATE_MODIFIED}}", "breadcrumb": { "@type": "BreadcrumbList", "itemListElement": [ { "@type": "ListItem", "position": 1, "name": "Home", "item": "https://qawmitimes.com/" }, { "@type": "ListItem", "position": 2, "name": "{{CATEGORY_NAME}}", "item": "{{CATEGORY_URL}}" }, { "@type": "ListItem", "position": 3, "name": "{{PAGE_TITLE}}", "item": "{{PAGE_URL}}" } ] } } ] }
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের ৪৪ বছর পর তৎকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বললেন—জিয়া হত্যা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়; বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি জানান, হত্যার পর লাশ দাফন ও উদ্ধারের ঘটনাও ছিল নাটকীয় ও বেদনাময়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় জেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। দীর্ঘ চার দশক পর তিনি বলেন, “এটি ছিল গভীর ষড়যন্ত্রের ফল, একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
লাশ উদ্ধারের নাটকীয়তা
হত্যার পরপরই সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রেসিডেন্টের মৃতদেহ সার্কিট হাউস থেকে নিয়ে যায়। তবে লাশ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেওয়া হয়নি। তৎকালীন ডিসি জানান, “রাতের বেলায় সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য একটি ট্রাকে করে প্রেসিডেন্টের লাশ রাঙ্গুনিয়ার বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানির কাছে একটি নির্জন স্থানে দাফন করে। একজন স্থানীয় মৌলবি অস্ত্রের মুখে ভয়ে নামাজ ও দাফনের কাজ সম্পন্ন করেন।”
ঘটনার খবর স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সুপার নির্দেশ দেন লাশ তুলে আনতে। জিয়াউদ্দিন ও বিভাগীয় কমিশনার সাইফুদ্দিন রাঙ্গুনিয়ায় গিয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, “সেনানিবাসে লাশ ড্রেসিং করার পর দেখলাম—মুখের এক পাশে কোনো মাংস নেই, গোঁফের অংশও উধাও। সেই দৃশ্য ছিল হৃদয়বিদারক।”
সেনাসদস্যরা দাবি করেন, জানাজা ছাড়া লাশ ঢাকায় পাঠাতে দেবেন না। তাই সেনানিবাসের হেলিপ্যাডে জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে মৃতদেহ ঢাকায় পাঠানো হয়।
সেদিনের চট্টগ্রাম: অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও রহস্যজনক অনুপস্থিতি
প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে হত্যার আগের দিন রাত ৯টা পর্যন্ত সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন ডিসি জিয়াউদ্দিন। বৈঠকটি দীর্ঘায়িত হয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটানোর লক্ষ্যে। রাত গভীর পর্যন্ত সভা চলতে থাকায় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট সকালে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু পরদিন ভোরেই ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড।
জিয়াউদ্দিন জানান, প্রেসিডেন্টের সফর ছিল হঠাৎ নির্ধারিত—মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। সাধারণত প্রেসিডেন্ট সফরের জন্য এক মাস আগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। “এই আকস্মিক সফরই আমাকে অবাক করেছিল,” বলেন তিনি।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল—চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্টের আগমনের সময় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর উপস্থিত ছিলেন না। ব্রিগেডিয়ার আজিজ জানিয়ে দেন, মঞ্জুর টেনিস খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। “প্রেসিডেন্ট তখন হেসে বলেছিলেন, ‘মঞ্জুরকে বলো, টেনিস একটু কম খেলতে।’”—বললেন জিয়াউদ্দিন।
প্রেসিডেন্টের শেষ সফরের দিন
২৯ মে, শুক্রবার। প্রেসিডেন্ট জিয়া চন্দনপুরা মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন। ডিসি জিয়াউদ্দিন তাঁর পাশে ছিলেন। নামাজ শেষে সার্কিট হাউসে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন—যেটি রাত পর্যন্ত চলে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গাড়িতে যাওয়ার সময় জিয়া বলেন, “বাঙালিরা শৃঙ্খলা শেখেনি। যদি ৯ মাস নয়, ২০ বছর যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেত, তাহলে তারা শৃঙ্খলার মানে বুঝত।”
এই ছিল জিয়াউদ্দিনের কাছে তাঁর সর্বশেষ কথোপকথন। কয়েক ঘণ্টা পরই তাঁকে হত্যা করা হয়।
লাশ নিয়ে বিতর্ক ও রাজনৈতিক তাচ্ছিল্য
ডিসি জিয়াউদ্দিন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর শুধু প্রশাসনিক বিভ্রান্তিই তৈরি হয়নি, রাজনৈতিক মহলেও দেখা দেয় নোংরা তাচ্ছিল্য। “তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতারা প্রেসিডেন্টের লাশ নিয়ে ব্যঙ্গ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন,” বলেন তিনি।
তার মতে, “দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনেতার মৃত্যুর পর এমন অবজ্ঞা কোনো সভ্য দেশে দেখা যায় না।”
এরশাদকে সন্দেহের ইঙ্গিত
সাক্ষাৎকারে জিয়াউদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল নেপথ্য কুশলী কে ছিলেন, সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে পরবর্তীতে ক্ষমতা নেওয়া জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসি জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরীর বয়ান শুধু ইতিহাসের সাক্ষ্য নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের ছায়াপাতের ইঙ্গিতও দেয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আকস্মিক সফর, সেনা নেতৃত্বের অস্বাভাবিক অনুপস্থিতি, এবং হত্যার পর দাফন-উদ্ধারের রহস্য—সব মিলিয়ে এই ঘটনার পূর্ণ সত্য আজও অন্ধকারে ঢাকা।
সূত্র: আমার দেশ

বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের ৪৪ বছর পর তৎকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বললেন—জিয়া হত্যা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়; বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি জানান, হত্যার পর লাশ দাফন ও উদ্ধারের ঘটনাও ছিল নাটকীয় ও বেদনাময়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় জেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। দীর্ঘ চার দশক পর তিনি বলেন, “এটি ছিল গভীর ষড়যন্ত্রের ফল, একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
লাশ উদ্ধারের নাটকীয়তা
হত্যার পরপরই সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রেসিডেন্টের মৃতদেহ সার্কিট হাউস থেকে নিয়ে যায়। তবে লাশ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেওয়া হয়নি। তৎকালীন ডিসি জানান, “রাতের বেলায় সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য একটি ট্রাকে করে প্রেসিডেন্টের লাশ রাঙ্গুনিয়ার বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানির কাছে একটি নির্জন স্থানে দাফন করে। একজন স্থানীয় মৌলবি অস্ত্রের মুখে ভয়ে নামাজ ও দাফনের কাজ সম্পন্ন করেন।”
ঘটনার খবর স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সুপার নির্দেশ দেন লাশ তুলে আনতে। জিয়াউদ্দিন ও বিভাগীয় কমিশনার সাইফুদ্দিন রাঙ্গুনিয়ায় গিয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, “সেনানিবাসে লাশ ড্রেসিং করার পর দেখলাম—মুখের এক পাশে কোনো মাংস নেই, গোঁফের অংশও উধাও। সেই দৃশ্য ছিল হৃদয়বিদারক।”
সেনাসদস্যরা দাবি করেন, জানাজা ছাড়া লাশ ঢাকায় পাঠাতে দেবেন না। তাই সেনানিবাসের হেলিপ্যাডে জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে মৃতদেহ ঢাকায় পাঠানো হয়।
সেদিনের চট্টগ্রাম: অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও রহস্যজনক অনুপস্থিতি
প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে হত্যার আগের দিন রাত ৯টা পর্যন্ত সার্কিট হাউসে বৈঠক করেন ডিসি জিয়াউদ্দিন। বৈঠকটি দীর্ঘায়িত হয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটানোর লক্ষ্যে। রাত গভীর পর্যন্ত সভা চলতে থাকায় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট সকালে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু পরদিন ভোরেই ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড।
জিয়াউদ্দিন জানান, প্রেসিডেন্টের সফর ছিল হঠাৎ নির্ধারিত—মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। সাধারণত প্রেসিডেন্ট সফরের জন্য এক মাস আগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। “এই আকস্মিক সফরই আমাকে অবাক করেছিল,” বলেন তিনি।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল—চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্টের আগমনের সময় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর উপস্থিত ছিলেন না। ব্রিগেডিয়ার আজিজ জানিয়ে দেন, মঞ্জুর টেনিস খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। “প্রেসিডেন্ট তখন হেসে বলেছিলেন, ‘মঞ্জুরকে বলো, টেনিস একটু কম খেলতে।’”—বললেন জিয়াউদ্দিন।
প্রেসিডেন্টের শেষ সফরের দিন
২৯ মে, শুক্রবার। প্রেসিডেন্ট জিয়া চন্দনপুরা মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন। ডিসি জিয়াউদ্দিন তাঁর পাশে ছিলেন। নামাজ শেষে সার্কিট হাউসে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন—যেটি রাত পর্যন্ত চলে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গাড়িতে যাওয়ার সময় জিয়া বলেন, “বাঙালিরা শৃঙ্খলা শেখেনি। যদি ৯ মাস নয়, ২০ বছর যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেত, তাহলে তারা শৃঙ্খলার মানে বুঝত।”
এই ছিল জিয়াউদ্দিনের কাছে তাঁর সর্বশেষ কথোপকথন। কয়েক ঘণ্টা পরই তাঁকে হত্যা করা হয়।
লাশ নিয়ে বিতর্ক ও রাজনৈতিক তাচ্ছিল্য
ডিসি জিয়াউদ্দিন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর শুধু প্রশাসনিক বিভ্রান্তিই তৈরি হয়নি, রাজনৈতিক মহলেও দেখা দেয় নোংরা তাচ্ছিল্য। “তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতারা প্রেসিডেন্টের লাশ নিয়ে ব্যঙ্গ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন,” বলেন তিনি।
তার মতে, “দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনেতার মৃত্যুর পর এমন অবজ্ঞা কোনো সভ্য দেশে দেখা যায় না।”
এরশাদকে সন্দেহের ইঙ্গিত
সাক্ষাৎকারে জিয়াউদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল নেপথ্য কুশলী কে ছিলেন, সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে পরবর্তীতে ক্ষমতা নেওয়া জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসি জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরীর বয়ান শুধু ইতিহাসের সাক্ষ্য নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের ছায়াপাতের ইঙ্গিতও দেয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আকস্মিক সফর, সেনা নেতৃত্বের অস্বাভাবিক অনুপস্থিতি, এবং হত্যার পর দাফন-উদ্ধারের রহস্য—সব মিলিয়ে এই ঘটনার পূর্ণ সত্য আজও অন্ধকারে ঢাকা।
সূত্র: আমার দেশ

আপনার মতামত লিখুন