ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা    রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
কওমী টাইমস

মসজিদ-মাদরাসা ও সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ; বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটি বিভাজন সৃষ্টির রাজনৈতিক প্রচেষ্টা

মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষিত মুসলমানদের নিশানা করে ভারতীয় মন্ত্রীর বিষোদগার


কওমী টাইমস ডেস্ক
কওমী টাইমস ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষিত মুসলমানদের নিশানা করে ভারতীয় মন্ত্রীর বিষোদগার

গত ১০ নভেম্বর রাজধানী দিল্লীতে ভয়াবহ বোমা হামলার পর থেকেই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের মধ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। দলের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে একাধিক নেতা এ ঘটনায় পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন এবং ইসলাম-ভীতিমূলক (Islamophobic) প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই ধারাবাহিক বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের জেরে এবার উত্তরপ্রদেশের রাজ্যমন্ত্রী রঘুরায় সিংয়ের দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যেখানে তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থাকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন।

বিজেপির এই ইসলাম-বিদ্বেষী প্রচারণাকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যমন্ত্রী রঘুরায় সিং সম্প্রতি ভিত্তিহীন দাবি করেছেন যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হয় মসজিদ বা মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত। তার আরও বিস্ফোরক দাবি, "শিক্ষিত মুসলিমরাই বৃহত্তর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে।"

সমালোচকরা মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে তথ্য-প্রমাণহীন, উসকানিমূলক এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকারক বলে বর্ণনা করেছেন। সিং তার বক্তব্যে ওসামা বিন লাদেনের শিক্ষাগত যোগ্যতার উদাহরণ টেনে ঢালাওভাবে সকল শিক্ষিত মুসলিমকে সাধারণীকরণ করার চেষ্টা করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা এই তুলনাকে বিভ্রান্তিকর ও তথ্যগতভাবে ভুল বলে মনে করছেন।

সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে উসকানি

রঘুরায় সিং শুধু এই মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি (AMU) সহ সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন। অথচ, কোনো সরকারি সংস্থাই এখন পর্যন্ত AMU-কে চরমপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো প্রমাণ পায়নি।

শিক্ষাবিদদের মধ্যে মন্ত্রীর এই মন্তব্য নীরবে কিন্তু উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, AMU এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিচারক, বিজ্ঞানী, সিভিল সার্ভেন্ট এবং পণ্ডিত তৈরি করেছে। সংখ্যালঘু নেতারা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এমন sweeping অভিযোগ আনার ফলে দেশের শিক্ষাগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাত্র ও নাগরিকদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

মন্ত্রী দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে "সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অপ্রয়োজনীয়" এবং বিশেষ মর্যাদার আড়ালে তারা বাড়াবাড়ি করে। তবে, নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে বলেছে যে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো সাংবিধানিক সুরক্ষার অধীনে পরিচালিত হয়, যা সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য তৈরি।

দুইবারের মন্ত্রী এবং প্রাক্তন বিজেপি জেলা সভাপতি সিং এর আগেও বহুবার উসকানিমূলক মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি পূর্বে মাদ্রাসাগুলিকে "সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র" বলে অভিহিত করেছেন এবং সুযোগ পেলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার শপথ করেছেন।

সর্বশেষ মন্তব্যের সময় তিনি সাবেক জম্মু ও কাশ্মীর মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবাদে কথিত সমর্থনের জন্য তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। আইনি বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার আদালতের, কোনো রাজনীতিবিদের নয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহ্রান মামদানিকেও ধর্মীয় ধর্মান্তরকরণের প্রচারের অভিযোগ এনে সমালোচনা করেন, যার পক্ষেও তিনি কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

মন্ত্রী সারাদেশে বোরকা নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলেছেন, এই যুক্তি দেখিয়ে যে এটি অনুপ্রবেশকারীদের সহায়তা করে। তবে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই যুক্তি নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কারণ পোশাক-ভিত্তিক প্রোফাইলিংয়ের সন্ত্রাস দমন মূল্য প্রমাণিত নয়।

বিষয় : ভারত ইসলামফোবিয়া

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫


মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষিত মুসলমানদের নিশানা করে ভারতীয় মন্ত্রীর বিষোদগার

প্রকাশের তারিখ : ২০ নভেম্বর ২০২৫

featured Image

গত ১০ নভেম্বর রাজধানী দিল্লীতে ভয়াবহ বোমা হামলার পর থেকেই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের মধ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। দলের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে একাধিক নেতা এ ঘটনায় পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন এবং ইসলাম-ভীতিমূলক (Islamophobic) প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই ধারাবাহিক বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের জেরে এবার উত্তরপ্রদেশের রাজ্যমন্ত্রী রঘুরায় সিংয়ের দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যেখানে তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থাকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন।

বিজেপির এই ইসলাম-বিদ্বেষী প্রচারণাকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যমন্ত্রী রঘুরায় সিং সম্প্রতি ভিত্তিহীন দাবি করেছেন যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হয় মসজিদ বা মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত। তার আরও বিস্ফোরক দাবি, "শিক্ষিত মুসলিমরাই বৃহত্তর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে।"

সমালোচকরা মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে তথ্য-প্রমাণহীন, উসকানিমূলক এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকারক বলে বর্ণনা করেছেন। সিং তার বক্তব্যে ওসামা বিন লাদেনের শিক্ষাগত যোগ্যতার উদাহরণ টেনে ঢালাওভাবে সকল শিক্ষিত মুসলিমকে সাধারণীকরণ করার চেষ্টা করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা এই তুলনাকে বিভ্রান্তিকর ও তথ্যগতভাবে ভুল বলে মনে করছেন।

সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে উসকানি

রঘুরায় সিং শুধু এই মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি (AMU) সহ সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন। অথচ, কোনো সরকারি সংস্থাই এখন পর্যন্ত AMU-কে চরমপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো প্রমাণ পায়নি।

শিক্ষাবিদদের মধ্যে মন্ত্রীর এই মন্তব্য নীরবে কিন্তু উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, AMU এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিচারক, বিজ্ঞানী, সিভিল সার্ভেন্ট এবং পণ্ডিত তৈরি করেছে। সংখ্যালঘু নেতারা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এমন sweeping অভিযোগ আনার ফলে দেশের শিক্ষাগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাত্র ও নাগরিকদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

মন্ত্রী দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে "সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অপ্রয়োজনীয়" এবং বিশেষ মর্যাদার আড়ালে তারা বাড়াবাড়ি করে। তবে, নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে বলেছে যে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো সাংবিধানিক সুরক্ষার অধীনে পরিচালিত হয়, যা সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য তৈরি।

দুইবারের মন্ত্রী এবং প্রাক্তন বিজেপি জেলা সভাপতি সিং এর আগেও বহুবার উসকানিমূলক মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি পূর্বে মাদ্রাসাগুলিকে "সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র" বলে অভিহিত করেছেন এবং সুযোগ পেলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার শপথ করেছেন।

সর্বশেষ মন্তব্যের সময় তিনি সাবেক জম্মু ও কাশ্মীর মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবাদে কথিত সমর্থনের জন্য তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। আইনি বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার আদালতের, কোনো রাজনীতিবিদের নয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহ্রান মামদানিকেও ধর্মীয় ধর্মান্তরকরণের প্রচারের অভিযোগ এনে সমালোচনা করেন, যার পক্ষেও তিনি কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

মন্ত্রী সারাদেশে বোরকা নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলেছেন, এই যুক্তি দেখিয়ে যে এটি অনুপ্রবেশকারীদের সহায়তা করে। তবে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই যুক্তি নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কারণ পোশাক-ভিত্তিক প্রোফাইলিংয়ের সন্ত্রাস দমন মূল্য প্রমাণিত নয়।


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত