পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ালেও, মেডিকেল রিপোর্টে কোনো প্রমাণ মেলেনি। নিরাপত্তা সংস্থার মতে, সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ এ অভিযোগকে হাতিয়ার বানিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে। ভারতীয় অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সংগঠনটি পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে।
খাগড়াছড়িতে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে টানা ছয় দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে—মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং পাহাড়ি–বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে।
নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য বলছে, ইউপিডিএফ ভারতের মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে সদস্যদের। সংগঠনটির সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, সহসভাপতি উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, নতুন কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সচিব চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ তিনটি শাখা নিয়ে সক্রিয়—পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ওমেনস ফেডারেশন ও ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফোরাম। মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২০০, এর মধ্যে ৩৭০–৪২০ জন সশস্ত্র।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইউপিডিএফের কাছে পৌঁছানো অধিকাংশ অস্ত্র ভারতের সীমান্ত দিয়ে আসছে। মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়মিত ছোট-বড় চালান প্রবেশ করছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-৪৭, এসএমজি, এলএমজি ও রাশিয়ান তৈরি হালকা অস্ত্র। কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী-চট্টগ্রাম ও বান্দরবান-কক্সবাজার রুট দিয়ে এসব অস্ত্র প্রবেশ করে পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছায়।
২০০৯ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত ইউপিডিএফ ৩৩২ জনকে অপহরণ করেছে এবং ৮৯ জনকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে সেনা সদস্যও রয়েছেন। শুধু গত এক বছরে সংগঠনটি প্রায় ১০৪ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের মানুষ, ব্যবসায়ী, কৃষক, পরিবহন মালিক ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ইউপিডিএফ ভারতীয় ইন্ধনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করছে। একই সঙ্গে আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেছেন, “যে কোনো অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে হবে। কিন্তু সেনাবাহিনী হটাও স্লোগান তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের অন্তত ১৫টি গ্রুপ সক্রিয়, তবে তাদের স্থায়ী ক্যাম্প ভারতের মিজোরামে। গত এক বছরে অর্ধশতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও সংগঠনটির কার্যক্রম এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গোয়েন্দাদের মতে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সরাসরি ইউপিডিএফকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে।
সবমিলিয়ে, খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ধর্ষণ নাটক ও দাঙ্গা উসকানির ঘটনা নতুন করে স্পষ্ট করছে—ইউপিডিএফ কেবল একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী নয়, বরং বিদেশি ইন্ধনে পরিচালিত একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি।

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ালেও, মেডিকেল রিপোর্টে কোনো প্রমাণ মেলেনি। নিরাপত্তা সংস্থার মতে, সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ এ অভিযোগকে হাতিয়ার বানিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে। ভারতীয় অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সংগঠনটি পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে।
খাগড়াছড়িতে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে টানা ছয় দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে—মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং পাহাড়ি–বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে।
নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য বলছে, ইউপিডিএফ ভারতের মিজোরামে ছয়টি ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে সদস্যদের। সংগঠনটির সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, সহসভাপতি উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, নতুন কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সচিব চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ তিনটি শাখা নিয়ে সক্রিয়—পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ওমেনস ফেডারেশন ও ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফোরাম। মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২০০, এর মধ্যে ৩৭০–৪২০ জন সশস্ত্র।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইউপিডিএফের কাছে পৌঁছানো অধিকাংশ অস্ত্র ভারতের সীমান্ত দিয়ে আসছে। মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়মিত ছোট-বড় চালান প্রবেশ করছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-৪৭, এসএমজি, এলএমজি ও রাশিয়ান তৈরি হালকা অস্ত্র। কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী-চট্টগ্রাম ও বান্দরবান-কক্সবাজার রুট দিয়ে এসব অস্ত্র প্রবেশ করে পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছায়।
২০০৯ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত ইউপিডিএফ ৩৩২ জনকে অপহরণ করেছে এবং ৮৯ জনকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে সেনা সদস্যও রয়েছেন। শুধু গত এক বছরে সংগঠনটি প্রায় ১০৪ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের মানুষ, ব্যবসায়ী, কৃষক, পরিবহন মালিক ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ইউপিডিএফ ভারতীয় ইন্ধনে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করছে। একই সঙ্গে আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেছেন, “যে কোনো অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে হবে। কিন্তু সেনাবাহিনী হটাও স্লোগান তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের অন্তত ১৫টি গ্রুপ সক্রিয়, তবে তাদের স্থায়ী ক্যাম্প ভারতের মিজোরামে। গত এক বছরে অর্ধশতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও সংগঠনটির কার্যক্রম এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গোয়েন্দাদের মতে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সরাসরি ইউপিডিএফকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে।
সবমিলিয়ে, খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ধর্ষণ নাটক ও দাঙ্গা উসকানির ঘটনা নতুন করে স্পষ্ট করছে—ইউপিডিএফ কেবল একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী নয়, বরং বিদেশি ইন্ধনে পরিচালিত একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি।

আপনার মতামত লিখুন