ঢাকা    বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা    বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
কওমী টাইমস

ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় বেড়েই চলেছে হতাহতের সংখ্যা

অস্ত্রবিরতির মধ্যেও রক্তাক্ত গাজা: ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে নিহত ৪৫ ফিলিস্তিনি


কওমী টাইমস ডেস্ক
কওমী টাইমস ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

অস্ত্রবিরতির মধ্যেও রক্তাক্ত গাজা: ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে নিহত ৪৫ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২টি মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হওয়াসহ মোট ৫৭ জন মৃত এবং ১৫৮ জন আহত অবস্থায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছেন। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এই সময়ের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় ৪৫ জন নিহত ও ১৫৮ জন আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলের শুরু করা হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ২১১ জনে, এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১৯ জন। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৮০-তে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন ৩০৩ জন। যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মোট ৪২৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও হাজার হাজার মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজা শহরের পূর্ব দিকে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলীয় আত-তুফফাহ এলাকার আশ-শা'ফ অঞ্চলে গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। গাজা সরকার জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী মোট ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ২৩০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে তারা ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তাদের দাবি, হলুদ রেখা পার হওয়া ব্যক্তিরা ‘সন্ত্রাসী’ ছিল এবং তারা ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য 'হুমকি' সৃষ্টি করেছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে নির্ধারিত 'হলুদ রেখা' মাঠে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত না থাকায় ইসরায়েলি সেনারা ভুল করে এটিকে অতিক্রম করা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির আবহের মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরে তাদের দখলদারিত্বমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জেরুজালেম গভর্নরেট জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব জেরুজালেমের এজ-জাইম শহরে ফারুক মোস্তফার একটি খামার 'লাইসেন্সবিহীন' অজুহাতে ধ্বংস করেছে। ই১ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যার উদ্দেশ্য হলো পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং বসতি স্থাপনকারীদের জন্য এলাকা তৈরি করা।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অধীনস্ত ওয়াল অ্যান্ড সেটেলমেন্ট রেসিস্ট্যান্স কমিশনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল সামরিক ও নিরাপত্তা উদ্দেশ্যে নাবলুস প্রদেশের কারিয়ুত, লাবন আশ-শারকি এবং আস-সাওয়িইয়া গ্রামে ৭০ ডুনামেরও (প্রায় ১৭ একর) বেশি ফিলিস্তিনি জমিতে দখল করেছে। এই জমিগুলো বসতির চারপাশে বাফার জোন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ২০২১ সাল থেকে পশ্চিম তীরে সামরিক উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনিদের ৫৫ হাজার ডুনাম জমি দখল করেছে এবং বসতি এলাকার চারপাশে বাফার জোন তৈরি করেছে।

বিষয় : গাজা ফিলিস্তিন

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫


অস্ত্রবিরতির মধ্যেও রক্তাক্ত গাজা: ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে নিহত ৪৫ ফিলিস্তিনি

প্রকাশের তারিখ : ২০ অক্টোবর ২০২৫

featured Image

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২টি মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হওয়াসহ মোট ৫৭ জন মৃত এবং ১৫৮ জন আহত অবস্থায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছেন। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এই সময়ের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় ৪৫ জন নিহত ও ১৫৮ জন আহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলের শুরু করা হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ২১১ জনে, এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১৯ জন। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৮০-তে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন ৩০৩ জন। যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মোট ৪২৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও হাজার হাজার মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজা শহরের পূর্ব দিকে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলীয় আত-তুফফাহ এলাকার আশ-শা'ফ অঞ্চলে গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। গাজা সরকার জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী মোট ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ২৩০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে তারা ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তাদের দাবি, হলুদ রেখা পার হওয়া ব্যক্তিরা ‘সন্ত্রাসী’ ছিল এবং তারা ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য 'হুমকি' সৃষ্টি করেছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে নির্ধারিত 'হলুদ রেখা' মাঠে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত না থাকায় ইসরায়েলি সেনারা ভুল করে এটিকে অতিক্রম করা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির আবহের মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরে তাদের দখলদারিত্বমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জেরুজালেম গভর্নরেট জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ব জেরুজালেমের এজ-জাইম শহরে ফারুক মোস্তফার একটি খামার 'লাইসেন্সবিহীন' অজুহাতে ধ্বংস করেছে। ই১ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যার উদ্দেশ্য হলো পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং বসতি স্থাপনকারীদের জন্য এলাকা তৈরি করা।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অধীনস্ত ওয়াল অ্যান্ড সেটেলমেন্ট রেসিস্ট্যান্স কমিশনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল সামরিক ও নিরাপত্তা উদ্দেশ্যে নাবলুস প্রদেশের কারিয়ুত, লাবন আশ-শারকি এবং আস-সাওয়িইয়া গ্রামে ৭০ ডুনামেরও (প্রায় ১৭ একর) বেশি ফিলিস্তিনি জমিতে দখল করেছে। এই জমিগুলো বসতির চারপাশে বাফার জোন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ২০২১ সাল থেকে পশ্চিম তীরে সামরিক উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনিদের ৫৫ হাজার ডুনাম জমি দখল করেছে এবং বসতি এলাকার চারপাশে বাফার জোন তৈরি করেছে।


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত