
দীর্ঘদিনের সীমান্ত সংঘাত এবং অবিশ্বাসের আবহে থাকা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবশেষে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় এক গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উভয় পক্ষের শীর্ষ গোয়েন্দা প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়িপ এর্দোয়ানের নির্দেশে তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থার (এমআইটি) প্রধান ইব্রাহিম কালিনও এই সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই চুক্তিকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার পথে 'প্রথম সঠিক পদক্ষেপ' হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুর্কি নিরাপত্তা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক এবং কাতারের সক্রিয় সহায়তায় কাতারের রাজধানী দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত নিরসনে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিশেষ নির্দেশে এমআইটি প্রধান কালিন এই আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত এই যুদ্ধবিরতি আলোচনায় উভয় দেশের গোয়েন্দা পরিষেবা প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মূল এজেন্ডা ছিল 'বিদ্যমান যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ এবং সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের স্থায়ী সমাধান'। রাত পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা ধরে চলা এই দীর্ঘ আলোচনার প্রতিটি মুহূর্তে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করা হয়।
যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও যাচাইযোগ্য নিশ্চিতকরণের জন্য আগামী দিনগুলিতে ফলো-আপ বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ১৪ ঘণ্টার আলোচনার পর, যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত দিকগুলি নিয়ে কাজ করার জন্য গঠিত কারিগরি কমিটির প্রথম বৈঠকটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ, অভিবাসন এবং সীমান্ত সুরক্ষার মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ অক্টোবর তুরস্ক, পাকিস্তান এবং কাতারের গোয়েন্দা প্রধানদের মধ্যে ইস্তাম্বুলে একটি ত্রিদেশীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে আফগানিস্তানের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়েছিল।
দোহায় সফল আলোচনা শেষে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় দেশই এই উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে তাদের মধ্যস্থতার জন্য তুরস্ক ও কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে ১৪ ঘণ্টার আলোচনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে আফগান পক্ষ থেকে পাকিস্তান ভূখণ্ডে হামলা বন্ধ হবে। তিনি আরও জানান, আগামী ২৫ অক্টোবর দুই দেশের প্রতিনিধি দল বিস্তারিত আলোচনার জন্য ইস্তাম্বুলে আবারও মিলিত হবে।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দারও দোহায় সম্পাদিত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটিকে 'সঠিক দিকে প্রথম পদক্ষেপ' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি তুরস্ক ও কাতারের গঠনমূলক ভূমিকার 'গভীর প্রশংসা' করেছেন।
আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদও দোহায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতাপূর্ণ কাজ করবে না এবং আফগানিস্তান পাকিস্তান আক্রমণকারী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থন করবে না। মুজাহিদ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে পারস্পরিক দাবি-দাওয়া পরীক্ষা এবং চুক্তি কার্যকর করার জন্য একটি প্রক্রিয়া (মেকানিজম) স্থাপনের ঘোষণা দেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক লিখিত বিবৃতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, "তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় দোহায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অর্জন এবং দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করার জন্য প্রক্রিয়া (মেকানিজম) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।" মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করে, তুরস্ক দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
বিষয় : পাকিস্তান তুরস্ক কাতার আফগানিস্তান
বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫
দীর্ঘদিনের সীমান্ত সংঘাত এবং অবিশ্বাসের আবহে থাকা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবশেষে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় এক গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উভয় পক্ষের শীর্ষ গোয়েন্দা প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়িপ এর্দোয়ানের নির্দেশে তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থার (এমআইটি) প্রধান ইব্রাহিম কালিনও এই সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই চুক্তিকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার পথে 'প্রথম সঠিক পদক্ষেপ' হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুর্কি নিরাপত্তা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক এবং কাতারের সক্রিয় সহায়তায় কাতারের রাজধানী দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত নিরসনে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিশেষ নির্দেশে এমআইটি প্রধান কালিন এই আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত এই যুদ্ধবিরতি আলোচনায় উভয় দেশের গোয়েন্দা পরিষেবা প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মূল এজেন্ডা ছিল 'বিদ্যমান যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ এবং সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের স্থায়ী সমাধান'। রাত পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা ধরে চলা এই দীর্ঘ আলোচনার প্রতিটি মুহূর্তে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করা হয়।
যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও যাচাইযোগ্য নিশ্চিতকরণের জন্য আগামী দিনগুলিতে ফলো-আপ বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ১৪ ঘণ্টার আলোচনার পর, যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত দিকগুলি নিয়ে কাজ করার জন্য গঠিত কারিগরি কমিটির প্রথম বৈঠকটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ, অভিবাসন এবং সীমান্ত সুরক্ষার মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ অক্টোবর তুরস্ক, পাকিস্তান এবং কাতারের গোয়েন্দা প্রধানদের মধ্যে ইস্তাম্বুলে একটি ত্রিদেশীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে আফগানিস্তানের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়েছিল।
দোহায় সফল আলোচনা শেষে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় দেশই এই উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে তাদের মধ্যস্থতার জন্য তুরস্ক ও কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে ১৪ ঘণ্টার আলোচনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে আফগান পক্ষ থেকে পাকিস্তান ভূখণ্ডে হামলা বন্ধ হবে। তিনি আরও জানান, আগামী ২৫ অক্টোবর দুই দেশের প্রতিনিধি দল বিস্তারিত আলোচনার জন্য ইস্তাম্বুলে আবারও মিলিত হবে।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দারও দোহায় সম্পাদিত চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটিকে 'সঠিক দিকে প্রথম পদক্ষেপ' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি তুরস্ক ও কাতারের গঠনমূলক ভূমিকার 'গভীর প্রশংসা' করেছেন।
আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদও দোহায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতাপূর্ণ কাজ করবে না এবং আফগানিস্তান পাকিস্তান আক্রমণকারী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থন করবে না। মুজাহিদ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে পারস্পরিক দাবি-দাওয়া পরীক্ষা এবং চুক্তি কার্যকর করার জন্য একটি প্রক্রিয়া (মেকানিজম) স্থাপনের ঘোষণা দেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক লিখিত বিবৃতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, "তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় দোহায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অর্জন এবং দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করার জন্য প্রক্রিয়া (মেকানিজম) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।" মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করে, তুরস্ক দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন