ঢাকা    বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা    বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
কওমী টাইমস

ইস্তাম্বুল হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশনের দুই দিনের বিশেষ আয়োজন: গাজার মানবিক সংকটে পড়া শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহের ভার কাঁধে নিয়েছে তুরস্কের শিশুরা

হৃদয় নিংড়ানো উদ্যোগ: নিজেদের খেলনা ও বই বিক্রি করে সহায়তায় এগিয়ে এল তুরস্কের শিশুরা


কওমী টাইমস ডেস্ক
কওমী টাইমস ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

হৃদয় নিংড়ানো উদ্যোগ: নিজেদের খেলনা ও বই বিক্রি করে সহায়তায় এগিয়ে এল তুরস্কের শিশুরা

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যা ও তীব্র মানবিক সংকটের মুখে নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই এগিয়ে এসেছে তুরস্কের শিশুরা। ১৮ অক্টোবর, শনিবার, ইস্তাম্বুল হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশন (IHH)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক অভিনব বিক্রয় কার্যক্রমে তারা নিজেদের পুরোনো খেলনা, বই এবং ফিলিস্তিনি থিমের স্মারক বিক্রি করছে। এই বিক্রয় থেকে সংগৃহীত সমস্ত অর্থ ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য, জল ও চিকিৎসা সংকটে থাকা শিশুদের সহায়তায় পাঠানো হবে। এই দুই দিনের আয়োজন প্রমাণ করে, মানবিকতার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নেই।

ইস্তাম্বুলের ঐতিহ্যবাহী উস্কুদার স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বিশেষ মানবিক কার্যক্রম, যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে: "ক্ষুদে কর্মীরা মাঠে, গাজার জন্য শিশু আন্দোলন।" এই কার্যক্রমে বিক্রির সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে শিশুরা নিজেরাই। তারা শুধু তাদের পুরোনো সামগ্রীই বিক্রি করছে না, বরং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের প্রতীকযুক্ত জিনিসপত্রও বিক্রি করছে, যা তাদের গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।

ইস্তাম্বুল হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারপার্সন সেরাপ ইশিত আলভিরান বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানান, গাজার প্রতি সমর্থন জানাতেই তারা এই আন্দোলন শুরু করেছেন। তিনি বলেন, দাতারা খাদ্য ও জলের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো গাজায় পৌঁছাতে সাহায্য করছেন, কিন্তু এই কার্যক্রমে শিশুরা হলো মূল চালিকাশক্তি। তিনি আরও যোগ করেন, "আমাদের ক্ষুদে কর্মীরা মাঠে নেমেছে। তারা তাদের গাজার ভাই-বোনদের জন্য ব্যবহৃত খেলনা ও বই সংগ্রহ করেছে এবং চিত্রাঙ্কন কর্মশালাও করেছে। তাদের শিল্পকর্মগুলো এখানে এনেছে এবং বিক্রির পর সেই অর্থ গাজায় পাঠানো হবে।"

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হাজের মাজেদ আনাদোলুর কাছে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে। গাজার শিশুদের সাহায্য করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে সে বলে, "যখন আমি খবরে গাজাকে দেখি, তখন আমার খুব খারাপ লাগে। মনে হয় এখনি কেঁদে ফেলি, আমার বুক ধড়ফড় করে। তাই আমি চাই না আমার বাবা-মা টিভিতে সেই দৃশ্যগুলো দেখুক, কারণ আমি দেখলে ভীষণ দুঃখ পাই ও আবেগমথিত হয়ে পড়ি।" মাজেদ দৃঢ়তার সঙ্গে জানায় যে সে ফিলিস্তিনি শিশুদের খুব ভালোবাসে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করবে।

আরেক ছাত্রী, এজরা ইনজি ইসলামোগলু, জানায়, "আমাদের লক্ষ্য হলো গাজার ভাই-বোনদের জন্য ভালো কিছু করার কারণ হওয়া। আমরা ঈশ্বরের কাছে তাদের সবার সহায় হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি।"

প্রতিবেদনে গাজার বর্তমান ভয়াবহ মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়। ৮ অক্টোবর, ২০২৩-এ ইসরায়েলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার ফিলিস্তিনিরা তীব্র মানবিক সংকট এবং ব্যাপক দুর্ভিক্ষের শিকার। অবিরাম বোমা হামলা ও কঠোর অবরোধের কারণে বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসরায়েল প্রায় দুই বছর ধরে এই গণহত্যা চালাচ্ছে, যার ফলে এ পর্যন্ত (সংবাদ প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত) ৬৮ হাজার ১১৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন। এই আক্রমণে গাজার ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

বিষয় : তুরস্ক গাজা

আপনার মতামত লিখুন

কওমী টাইমস

বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫


হৃদয় নিংড়ানো উদ্যোগ: নিজেদের খেলনা ও বই বিক্রি করে সহায়তায় এগিয়ে এল তুরস্কের শিশুরা

প্রকাশের তারিখ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫

featured Image

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যা ও তীব্র মানবিক সংকটের মুখে নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই এগিয়ে এসেছে তুরস্কের শিশুরা। ১৮ অক্টোবর, শনিবার, ইস্তাম্বুল হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশন (IHH)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক অভিনব বিক্রয় কার্যক্রমে তারা নিজেদের পুরোনো খেলনা, বই এবং ফিলিস্তিনি থিমের স্মারক বিক্রি করছে। এই বিক্রয় থেকে সংগৃহীত সমস্ত অর্থ ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য, জল ও চিকিৎসা সংকটে থাকা শিশুদের সহায়তায় পাঠানো হবে। এই দুই দিনের আয়োজন প্রমাণ করে, মানবিকতার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নেই।

ইস্তাম্বুলের ঐতিহ্যবাহী উস্কুদার স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বিশেষ মানবিক কার্যক্রম, যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে: "ক্ষুদে কর্মীরা মাঠে, গাজার জন্য শিশু আন্দোলন।" এই কার্যক্রমে বিক্রির সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে শিশুরা নিজেরাই। তারা শুধু তাদের পুরোনো সামগ্রীই বিক্রি করছে না, বরং ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের প্রতীকযুক্ত জিনিসপত্রও বিক্রি করছে, যা তাদের গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।

ইস্তাম্বুল হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারপার্সন সেরাপ ইশিত আলভিরান বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানান, গাজার প্রতি সমর্থন জানাতেই তারা এই আন্দোলন শুরু করেছেন। তিনি বলেন, দাতারা খাদ্য ও জলের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো গাজায় পৌঁছাতে সাহায্য করছেন, কিন্তু এই কার্যক্রমে শিশুরা হলো মূল চালিকাশক্তি। তিনি আরও যোগ করেন, "আমাদের ক্ষুদে কর্মীরা মাঠে নেমেছে। তারা তাদের গাজার ভাই-বোনদের জন্য ব্যবহৃত খেলনা ও বই সংগ্রহ করেছে এবং চিত্রাঙ্কন কর্মশালাও করেছে। তাদের শিল্পকর্মগুলো এখানে এনেছে এবং বিক্রির পর সেই অর্থ গাজায় পাঠানো হবে।"

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হাজের মাজেদ আনাদোলুর কাছে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে। গাজার শিশুদের সাহায্য করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে সে বলে, "যখন আমি খবরে গাজাকে দেখি, তখন আমার খুব খারাপ লাগে। মনে হয় এখনি কেঁদে ফেলি, আমার বুক ধড়ফড় করে। তাই আমি চাই না আমার বাবা-মা টিভিতে সেই দৃশ্যগুলো দেখুক, কারণ আমি দেখলে ভীষণ দুঃখ পাই ও আবেগমথিত হয়ে পড়ি।" মাজেদ দৃঢ়তার সঙ্গে জানায় যে সে ফিলিস্তিনি শিশুদের খুব ভালোবাসে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করবে।

আরেক ছাত্রী, এজরা ইনজি ইসলামোগলু, জানায়, "আমাদের লক্ষ্য হলো গাজার ভাই-বোনদের জন্য ভালো কিছু করার কারণ হওয়া। আমরা ঈশ্বরের কাছে তাদের সবার সহায় হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি।"

প্রতিবেদনে গাজার বর্তমান ভয়াবহ মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়। ৮ অক্টোবর, ২০২৩-এ ইসরায়েলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার ফিলিস্তিনিরা তীব্র মানবিক সংকট এবং ব্যাপক দুর্ভিক্ষের শিকার। অবিরাম বোমা হামলা ও কঠোর অবরোধের কারণে বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসরায়েল প্রায় দুই বছর ধরে এই গণহত্যা চালাচ্ছে, যার ফলে এ পর্যন্ত (সংবাদ প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত) ৬৮ হাজার ১১৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন। এই আক্রমণে গাজার ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।


কওমী টাইমস

সম্পাদক ও প্রকাশক : মুস্তাইন বিল্লাহ
কপিরাইট © ২০২৫ কওমী টাইমস । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত