কওমী টাইমস
প্রকাশ : Aug 9, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

মোদি–নেতানিয়াহু: উন্নয়নের মুখোশে গণতন্ত্র ও সহাবস্থানের সংকট

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আদর্শিকভাবে ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিক কৌশলে সমান্তরাল পথের যাত্রী। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাফল্য সত্ত্বেও, উভয় দেশের সমাজ এখন গভীর বিভাজন, ধর্মীয় উত্তেজনা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ক্ষয়ের মুখে।

নরেন্দ্র মোদি ও বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু—দুই দেশপ্রধানই জনতাবাদী ক্যারিশমা, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা এবং ধর্মীয়ভাবে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে এক নতুন রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলেছেন। নিজেদের প্রাচীন সভ্যতার রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সমর্থন সুসংহত করেছেন এবং ভিন্নমতকে প্রায়শই রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

নেতানিয়াহুর আমলে ইসরায়েল প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বমানের অবস্থান তৈরি করেছে, আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। মোদির নেতৃত্বে ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে, ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিপ্লব ঘটেছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে, এই সাফল্যের আড়ালে স্পষ্ট বৈষম্য ও বিভাজন রয়েছে। ভারতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেনি, কর্পোরেট একচেটিয়া ব্যবসা বেড়েছে। ইসরায়েলে তেল আবিব সমৃদ্ধ হলেও দখলকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা দারিদ্র্য ও বঞ্চনার মধ্যে রয়েছে।

গণতান্ত্রিক কাঠামো দুই দেশেই চাপে। ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংস্থার ব্যবহার বেড়েছে, স্বাধীন সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। ইসরায়েলে ২০২৩ সালের বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় সংস্কার গণবিরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে।

ধর্মীয় মেরুকরণ দুই দেশেই উদ্বেগজনক মাত্রা পেয়েছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী নীতি মুসলিম, খ্রিস্টান ও দলিত সম্প্রদায়কে প্রান্তিক করেছে, ঘৃণাজনিত সহিংসতা বেড়েছে। ইসরায়েলে ২০১৮ সালের জাতি–রাষ্ট্র আইন আরব নাগরিকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় ঠেলে দিয়েছে; গাজা ও পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও টার্গেট হয়েছে।

বিদেশনীতি ক্ষেত্রেও দুই নেতা সামরিকবাদী পদক্ষেপে আগ্রহী। নেতানিয়াহু গাজায় একাধিকবার সামরিক অভিযান চালিয়েছেন, আর মোদি সরকার বালাকোট বিমান হামলা ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে, যা দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নেতারা আধুনিকায়নের রূপকার হবেন নাকি বিভাজন ও গণতান্ত্রিক ক্ষয়ের প্রতীক—তা নির্ভর করবে তাদের রেখে যাওয়া সমাজের ওপর। ন্যায়, ঐক্য ও শান্তির সমাজ হলে তারা ইতিবাচকভাবে স্মরণীয় হবেন, অন্যথায় ইতিহাস তাদের আরও ভাঙা, অস্থির ও সংঘাতময় রাষ্ট্রের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত করবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওপেন হার্ট সার্জারির পর সুস্থতার পথে জামায়াত আমির, চীন-পাকিস

1

কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে ১৫ নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাত

2

ফ্যাসিবাদ নিধনে ঐক্যই জয়ী করবে: জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নের আ

3

আফগানিস্তানে কৃষি ও পশুপালনে বিপ্লব: তালেবান সরকারের অধীনে ৩

4

ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো

5

দক্ষিণ সিরিয়ায় রুশ সেনা টহল ফেরাতে দামেস্কের প্রস্তাব, ইসরায়

6

রংপুরে হিন্দুপল্লিতে হামলা: সাংবাদিক সেলিম রিমান্ডে, ৬ জন গ্

7

গাজার শিশুদের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না: আমেরিকান গায়িকা ম্যাড

8

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক ফাঁক’ উন্মোচ

9

জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ, সাধারণ আলেম সমাজের ক

10

আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড: রায়ে উঠে এল ভয়

11

গোপন বন্দি শিবিরে ফিলিস্তিনিরা শিকার হচ্ছেন নির্যাতন ও ধর্ষণ

12

ভারতের ওপর ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টার কড়া অভিযোগ: ‘রাশিয়া থে

13

ভারতে মুসলমানদের বিতাড়ন ও নির্যাতনের নেপথ্যে বিজেপির রাজনৈতি

14

ইসরায়েলি অবরোধের মাঝে গাজায় ৩৮ ট্রাক ত্রাণ পাঠাল জর্ডান

15

স্বাস্থ্যের মডেল শহর: মদিনাকে ‘স্বাস্থ্যকর নগরী’ হিসেবে স্বী

16

মক্কায় মোজাইকে লেখা সর্ববৃহৎ কোরআন প্রদর্শন

17

বেনাপোলে বিদেশি পিস্তল-গুলিসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

18

গাজার জন্য তুরস্কের হৃদয়স্পর্শী সহায়তা: ১৬৫ ট্রাকে পাঠানো হল

19

ইসলামপন্থিদের ঐক্যে রক্ষা পাবে দেশের স্বাধীনতা — ড. মাহমুদুর

20