ভারতে বসবাসকারী বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপর চলমান দমন–পীড়নের চিত্র উঠে এসেছে আল জাজিরার সম্প্রতি প্রচারিত এক অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে। এতে বলা হয়, বিজেপি সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যম মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে ধারাবাহিক বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে, তা কেবল সামাজিক বিদ্বেষ নয়—বরং রাষ্ট্রীয় নীতির অংশে পরিণত হয়েছে।
আল জাজিরায় সম্প্রচারিত তথ্যচিত্র অনুযায়ী, ভারতের মুসলমান, বিশেষত বাংলাভাষী মুসলমানরা এখন শুধু সামাজিক বৈষম্য নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারার অজুহাতে তাদের আটক, হয়রানি এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে। এই নিপীড়নের শুরু হয় ২০১৮ সালে নাগরিকপঞ্জি (NRC) হালনাগাদের মাধ্যমে। তাতে লাখো মুসলমান নাগরিকত্ব হারান, যাঁদের অধিকাংশই ভারতে জন্মগ্রহণকারী।
তথ্যচিত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শোয়েব দানিয়াল বলেন, একজন মুসলমান যদি বাঙালি হন, তাহলে তার প্রতি পুলিশের আচরণ সন্দেহমূলক হয়। অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ নিজেদের সিদ্ধান্তে নাগরিকত্ব নির্ধারণ করে এবং মানুষকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
গণমাধ্যম এই বৈষম্যকে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তথ্যমতে, ভারতের শত শত সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল মুসলমানদের শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করছে। সরকার সমর্থিত এই চ্যানেলগুলো তাদের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরছে, যা হিন্দু সংখ্যাগোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা উসকে দিচ্ছে।
সাংবাদিক ফাতিমা খান জানান, ‘বুলডোজার জাস্টিস’ ধারণাটিকে মিডিয়া উচ্ছ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। দিল্লি, আসাম, মুম্বাইসহ বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের ঘরবাড়ি, এমনকি মসজিদ পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যার অনেকগুলোর পেছনে কোনো আইনি বৈধতা নেই।
ফ্রন্টলাইন ম্যাগাজিনের সম্পাদক বৈষ্ণা রয় বলেন, “ভারতের হিন্দুরা সংখ্যাগুরু, ক্ষমতার শীর্ষে। মুসলমানদের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল।”
সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা পরান গুহ ঠাকুরতা জানান, বিজেপির “বুলডোজার” এখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
এভাবে রাষ্ট্রীয় নীতি, মিডিয়া প্রচার ও সামাজিক বিদ্বেষ মিলিয়ে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর পথ সুগম করা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই প্রবণতা শুধু ভারতের অভ্যন্তরেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করছে।